সীমা...
(লেখক ; লাড্ডু, এডিটর
খোকা)
এক...
আমার নাম সীমা, বয়স ১৭। আমরা থাকি কলকাতা থেকে প্রায় ৭০ কিমি দূরের এক ছোট্ট শহরে। আমার বাবার শহরে ছোট একটা দোকান আছে। আমাদের মধ্যবিত্ত বলা যেতে পারে, তবে নিম্ন মধ্যবিত্ত বললেই ভাল হয়। আমার জীবনের বেশিরভাগ সখগুলোই আর্থিক ও পুরনো সংস্কারের কারনে পুরন হয়নি এ দেশের বেশিরভাগ মেয়ের মত।
আমাদের পরিবার ছোট, বাবা, মা আর আমি। ছোটবেলায় আমাদের পরিবার যৌথ পরিবার ছিল, আমার জেঠুরাও একসাথে থাকত। জেঠুর এক ছেলে, রনি, যাকে আমি ছোটবেলায় দাদা বলেই ডাকতাম, আমার চেয়ে ৭ বছরের বড় ছিল। দাদা পড়াশোনায় খুবই ভাল ছিল। আর দাদা আমাকে খুব ভালবাসত তখন, আমি যা চাইতাম তাই করত। জেঠু স্কুল টিচার ছিল। যখন আমার বয়স ৮-৯, তখন জেঠু কলকাতায় বদলি নিয়ে চলে যায় পরিবার নিয়ে।
জেঠু চলে যাওয়ার পরে আমাদের আর্থিক কষ্ট বাড়ে, ছোট্ট পরিবার কোনরকমে চালিয়ে নিয়ে যায় বাবা। আমি বেশ কষ্ট নিয়ে বড় হতে থাকি। এত সুন্দর ফর্শা চেহারা নিয়েও একটু সাজা, ভাল পোষাক পরার ইচ্ছা সহ কোন সখই পুরন করতে না পেরে।
আমি পড়তাম গার্লস স্কুলে। আমার প্রিয় বান্ধবী ছিল নেহা। ওকেও দেখতে খুব ভাল। ওদের একান্নবর্তী পরিবার, আর্থিক অবস্থা আমাদের মতই। কিন্তু ওকে বাড়িতে ভিশন কড়া শাসনে রাখত। ওর ভাগ্য একদিক থেকে আমার চেয়েও বেশি খারাপ ছিল, ওর তুতো দাদাদের ও ভিশন ভয় করত।
ও একটু চুপচাপ প্রকৃতির মেয়ে ছিল, আর আমি একটু বেশিই কথা বলতাম। ও বলত কম, শুনত বেশি। এইভাবে আমাদের বন্ধুত্ব ক্রমে গভীর হয়ে উঠছিল। নেহা বয়সে ছিল আমার চেয়ে কয়েক মাসের বড়। ক্লাস ৮ এ ওঠার পর প্রথম বুঝতে পারলাম ও শুধু আমার বন্ধুই না, একটু বেশি কিছু! ওর প্রতি ভাললাগাটা শুধু বন্ধুর প্রতি টান না, তার চেয়ে অনেক বেশি। আমাদের স্কুলের বাকি মেয়েরা বয়:স্বন্ধির প্রভাবে ছেলেদের প্রতি কৌতুহল দেখাত, আমার সেই সব একদমই ভাল লাগত না। সম্ভবত নেহার ও না।
আমাদের পরিবার ছোট, বাবা, মা আর আমি। ছোটবেলায় আমাদের পরিবার যৌথ পরিবার ছিল, আমার জেঠুরাও একসাথে থাকত। জেঠুর এক ছেলে, রনি, যাকে আমি ছোটবেলায় দাদা বলেই ডাকতাম, আমার চেয়ে ৭ বছরের বড় ছিল। দাদা পড়াশোনায় খুবই ভাল ছিল। আর দাদা আমাকে খুব ভালবাসত তখন, আমি যা চাইতাম তাই করত। জেঠু স্কুল টিচার ছিল। যখন আমার বয়স ৮-৯, তখন জেঠু কলকাতায় বদলি নিয়ে চলে যায় পরিবার নিয়ে।
জেঠু চলে যাওয়ার পরে আমাদের আর্থিক কষ্ট বাড়ে, ছোট্ট পরিবার কোনরকমে চালিয়ে নিয়ে যায় বাবা। আমি বেশ কষ্ট নিয়ে বড় হতে থাকি। এত সুন্দর ফর্শা চেহারা নিয়েও একটু সাজা, ভাল পোষাক পরার ইচ্ছা সহ কোন সখই পুরন করতে না পেরে।
আমি পড়তাম গার্লস স্কুলে। আমার প্রিয় বান্ধবী ছিল নেহা। ওকেও দেখতে খুব ভাল। ওদের একান্নবর্তী পরিবার, আর্থিক অবস্থা আমাদের মতই। কিন্তু ওকে বাড়িতে ভিশন কড়া শাসনে রাখত। ওর ভাগ্য একদিক থেকে আমার চেয়েও বেশি খারাপ ছিল, ওর তুতো দাদাদের ও ভিশন ভয় করত।
ও একটু চুপচাপ প্রকৃতির মেয়ে ছিল, আর আমি একটু বেশিই কথা বলতাম। ও বলত কম, শুনত বেশি। এইভাবে আমাদের বন্ধুত্ব ক্রমে গভীর হয়ে উঠছিল। নেহা বয়সে ছিল আমার চেয়ে কয়েক মাসের বড়। ক্লাস ৮ এ ওঠার পর প্রথম বুঝতে পারলাম ও শুধু আমার বন্ধুই না, একটু বেশি কিছু! ওর প্রতি ভাললাগাটা শুধু বন্ধুর প্রতি টান না, তার চেয়ে অনেক বেশি। আমাদের স্কুলের বাকি মেয়েরা বয়:স্বন্ধির প্রভাবে ছেলেদের প্রতি কৌতুহল দেখাত, আমার সেই সব একদমই ভাল লাগত না। সম্ভবত নেহার ও না।
আধা গ্রাম্য, কিছুটা রক্ষনশীল পরিবারে বড় হওয়া আমাদের পক্ষে বাকিদের সাথে আমাদের পার্থক্যটা বোঝজা খুব সহজ হয়নি। আমার যে ছেলেদের প্রতি কোন আকর্ষন নেই, মেয়ে হয়েও যাবতীয় আকর্ষন মেয়েদের প্রতি, বিশেষত আমার প্রিয় বান্ধবী নেহার প্রতি এটা সম্পুর্ন বুঝতে আরও দুই বছর কেটে গিয়েছিল আমার। আর কিরকম এক অজানা ভয় যেন গ্রাস করেছিল আমাকে। আমি যে এরকম সেটা বাড়ির লোকে জানলে কি হবে?
মাধ্যমিকের পর ক্রমে জানতে পারলাম নেহার অবস্থাও আমার মতই। আমার প্রতি ওর আকর্ষন একই রকম দুর্বার, আর ছেলেদের প্রতি ওর কোন আকর্ষন নেই আমারই মতো। সেই বয়সে যেমন প্রথম কেঁপে উঠেছি নেহার ঠোঁটে ঠোঁট রাখার আনন্দে, তার চেয়েও বেশি কেঁপেছি ভয়ে। কেন আমরা এরকম হলাম? আমাদের সংস্কারাচ্ছন্ন নিম্নবিত্ত পরিবারকে আমরা কিভাবে বোঝাব প্রকৃতির ইচ্ছাতেই আমরা এরকম হয়েছি, আমাদের পক্ষে আর পাঁচটা মেয়ের মতো কোন ছেলেকে বিয়ে করে সংসার করা সম্ভব হবে না কখনও।
ক্রমে বুঝতে পারলাম আমাদের দুজনের পরিবারই আমাদের সম্পর্ককে সন্দেহের চোখে দেখছে। আমাকে মা তবু ঘুরিয়ে জিজ্ঞাসা করত নেহার সাথে আমার সম্পর্কের কথা, মায়ের গলায় এক গভীর উদ্বেগের ছোঁয়া পেতাম তখন। নেহার ভাগ্য আমার চেয়ে অনেক খারাপ ছিল। ওকে আমার সাথে দেখা করতে বাধা দিত ওদের বাড়ি থেকে, বকা এমনকি মারও জুটত অনেক সময় ওর ভাগ্যে। শুধু একই স্কুলে একসাথে সায়েন্স নিয়ে পড়ায় আমাদের দেখা হওয়া কেউ পুরো বন্ধ করতে পারেনি। আমরা একসাথে বসে গল্প করতাম, আর ভবিষ্যতের কালো মেঘ আমাদের মনের প্রেক্ষাপটে ভেসে উঠত বারবার। কার কি ক্ষতি হত আমাদের একসাথে সারাজীবন থাকতে দিলে? কেন অধিকাংশ মানুষের বিপরীত লিঙ্গের মানুষের প্রতি আকর্ষন থাকে বলে আমাদের মতো সংখ্যালঘু মানুষদের উপরে সেটা জোর করে চাপিয়ে দেওয়া হবে? কেন আমাদের সমলিঙ্গের প্রতি ভালবাসা বৈধতা পাবে না? প্রকৃতিতে তো মানুষ বা অন্য প্রানীদের মধ্যেও সম্লিঙ্গের মধ্যে সম্পর্কের অজস্র উদাহরন আছে। প্রকৃতি ব্যতিক্রম পছন্দ করে, তাই আমরা এরকম। যেমন অধিকাংশ মানুষ ডানহাতি হলেও কেউ কেউ বামহাতি হয়, তেমনই অধিকাংশ মানুষ বিসমকামী হলেও কারো কারো ভাললাগা সমলিঙ্গের প্রতিই ঘটে। কার কি ক্ষতি হয় এই ব্যতিক্রমকে মেনে নিলে? কেন মেনে নেয় না, এই রক্ষনশীল সমাজ আমাদের? কেন, কেন, কেন? কার কি ক্ষতি হয় এই স্বাভাবিকতা মেনে নিলে? এক সমাধানহীন সমস্যার জালে আমরা ক্রমে যেন গভীরভাবে জড়িয়ে পরতে লাগলাম দিন দিন।
এইভাবেই দিন কাটতে লাগল আমাদের, আমরা উচ্চমাধ্যমিক পাশ করলাম বিজ্ঞান নিয়ে। রেজাল্ট মোটামুটি ভালই হল। জয়েন্টে দুজনেরই র্যাংক হল ৫০০০ এর কাছাকাছি। মোটামুটি ভাল প্রাইভেট কলেজে এই নিয়ে দুজনেই ইঞ্জিনিয়ারিং পড়ার চান্স পেতে পারি, কিন্তু প্রাইভেটে পড়ার মতো টাকা আমাদের নেই। ইশ, যদি সরকারী কলেজে স্কলারশীপ পাওয়ার মতো রেজাল্ট করতে পারতাম, অন্তত পরের চার বছর একসাথে থাকতে পারতাম আমরা। কিন্তু এখন কি করব আমরা?
নেহার সাথে আমাকে দেখাও করতে দিচ্ছিল না ওদের বাড়ির লোক, কারন ওদের বাড়িতে সন্দেহ করতে শুরু করেছিল আমরা শুধু সাধারন বন্ধু নই। শুধু যখন ও একা থাকত ওকে ফোন করে জানতে পারতাম ওর কথা। এইভাবেই জানতে পারলাম ওর বাড়ি থেকে ওর বিয়ের জন্য দেখাশোনা চলছে।
ক্রমেই আমরা বুঝতে পারছিলাম এই অসম যুদ্ধে হারই আমাদের একমাত্র পরিনতি। খালিহাতে যেমন কামানের বিরুদ্ধে লড়াই করা যায় না, তেমনই দুজন অসহায় ১৭- ১৮ বছর
বয়সী মেয়ের পক্ষে সম্ভব না, সমগ্র সমাজ, তার বহু শতাব্দীর বদ্ধমুল কুসংস্কারের
বিরুদ্ধে লড়াই করা। বিষাদ সমুদ্রে প্রতিদিনই একটু একটু করে ডুবে যেতে যেতে জীবনে
এখন কি করব, কি নিয়ে পড়ার চেষ্টা করব, কোন সিদ্ধান্তই নিতে পারছিলাম না। সেই সময়ে
জেঠু, জেঠি আর রনিদা আমাদের বাড়ি এল।
জেঠু এখন ঠিক কলকাতায় থাকে না, কলকাতা
থেকে প্রায় ৩০ কিমি দূরে শহরতলিতে থাকে, সেখানকার একটা স্কুলেই পড়ায়। দাদা খড়গপুর
আইআইটি থেকে বি টেক পাশ করে এখন কলকাতাতেই এক বহুজাতিক কম্পানিতে বিশাল মাইনেতে
চাকরি করে। সেখানেই দাদা একটা বড় ফ্ল্যাট কিনে থাকে।
দাদারা প্রায় দুইদিন ছিল আমাদের বাড়িতে।
এই দুই দিন একটু ভাল কাটল আমার, অন্য গতানুগতিক দিনের থেকে। দাদা ছোটবেলায় আমাকে
খুব ভালবাসত, এখনও রেগুলার কথা না হলেও ছোট বোনের প্রতি সেই ভালবাসার ছোঁয়া এতদিন
পরেও রয়েছে বুঝতে পারলাম। আমার রেজাল্টের কথা শুনে দাদা আমাকে ইঞ্জিনিয়ারিং পড়তে
পরামর্শ দিল। “ কোন অসুবিধা হলে আমাকে বলিস, আমি তো আছি”, দাদা বলে গেল যাওয়ার আগে।
যেদিন দাদারা চলে গেল তার কয়েক দিন পর খবর
পেলাম নেহার বিয়ে পাকা হয়ে গেছে। ছেলেটি ওর চেয়ে প্রায় ১২ বছরের বড়, কলকাতায়
ছোটখাটো ব্যবসা করে। তবে ছেলেটির বাড়িতে কাজ হচ্ছে, তাই সে ৭-৮ মাস পর বিয়ে করবে।
অসম যুদ্ধে ইতি দিতে হবে ইচ্ছা না থাকলেও সেটা
স্পষ্ট হয়ে এল। আমি সারারাত বুকে বালিশ জড়িয়ে কাঁদলাম। সারারাত জেগে ভোরে উঠে
প্রতিজ্ঞা করলাম আমি অন্তত জীবনে কোন ছেলেকে কিছুতেই বিয়ে করব না। আর সেটা করতে
হলে আমাকে পড়াশোনা ঠিক করে করতে হবে, ভাল চাকরি পেতে হবে। তার জন্য ইঞ্জিনিয়ারিং
পড়াই সবচেয়ে ভাল। কি করতে হবে মোটামুটি ঠিক করে ভোরের দিকে কান্নাভেজা চোখে ঘুমাতে
গেলাম আমি।
খড়কুটোর মতো জীবন স্রোতে ভেসে চলা আমাকে এখন
শুধু দাদাই বাঁচাতে পারে। পরদিন সন্ধ্যা নটায় আমি দাদাকে ফোন করলাম পরিকল্পনা মতো।
দাদাকে খুলে বললাম আমাকে প্রাইভেটে
ইঞ্জিনিয়ারিং পড়ানোর সামর্থ্য বাবার নেই , তুই কি কিছু সাহায্য করতে পারবি প্লিজ?
দাদা শুধু হেসে বলল, “ ধুর পাগলী, আমি তোর দাদা হই না? আমি ব্যবস্থা করে দেব
লোনের। কাছাকাছি কলেজ হলে আমার এখানেই থাকবি”।
দাদার কথা শুনে একটু নিশ্চিত হলাম। আসলে
তো রনিদা আমার নিজের দাদা না, জেঠতুতো দাদা, সে যতই একান্নবর্তী পরিবারের হিসাবে
আমাদের আপন ভাইবোন ধরা হোক। তারপরেও একবার বলাতেই দাদা হাসিমুখে আমার ইঞ্জিনিয়ারিং
পড়ার এত টাকা দিতে রাজি হয়ে গেল? সত্যি, পৃথিবীতে মানব প্রজাত্রি বেঁচে আছে এখনো
দাদার মতো কিছু ভাল মানুষ টিকে আছে বলেই!!
দুই...
আমি জীবনের প্রথম যুদ্ধে হার স্বীকার করে সামনে এগনোর
চেষ্টা করছিলাম। শুধু ফোনে মাঝে মাঝে নেহার সাথে একটু কথা হত। নেহাকে সম্ভবত
কলেজেও ভর্তি করাবে না আর। কিন্তু অসহায় হয়ে ওর দুঃখে কষ্ট পাওয়া ছাড়া আর কিছু
করার সামর্থ্য নেই আমার।
প্রথম কাউন্সিলিং এ আমি কলকাতার একটা
মোটামুটি ভাল কলেজে ভর্তি হয়ে গেলাম ইলেক্ট্রনিক্স নিয়ে। কলেজটা দাদার ফ্ল্যাটের
কাছেই। কলেজ তখনও শুরু হয়নি। তার আগেই আমি দাদার ফ্ল্যাটে গিয়ে উঠলাম। ভাল
লোকেশনের দুতলায় বেশ সুন্দর ফ্ল্যাট, ৩ টে বেডরুম, সাথে কিচেন, টয়লেট, বারান্দা
সবই আছে।
দাদার সাথে শেষ যখন ভাল ভাব ছিল, তখন আমরা
একসাথে থাকতাম। আমার বয়স তখন প্রায় ৯ আর দাদার প্রায় ১৬। এতদিন পর ক্রমে আমাদের সম্পর্ক যেন আগের মতই কাছের হয়ে উঠতে
লাগল।
বাড়ির হিসাবে আমরা যেহেতু ভাইবোন তাই আমাদের
বাড়ির কেউই দাদার সাথে থেকে বা দাদার টাকায় পড়া নিয়ে তেমন আপত্তি করেনি। আমার ইঞ্জিনিয়ারিং এর কাউন্সলিং হওয়ারপ্রায়
দুই সপ্তাহ আগে এক শনিবার সকালে আমি গিয়ে দাদার ফ্ল্যাটে উঠলাম। দাদা স্টেশান থেকে আমাকে পিক আপ করে আনল। আমি ছোট্ট একটা ব্যাগে সামান্য কিছু জামা কাপড়
এনেছিলাম। দাদা জোর করে বিকালেই শপিং এ নিয়ে গেল। আমি আপত্তি করতে গেলেও দাদা শুনল না।
“ দাদার টাকায় কিনছিস, এত
সঙ্কোচের
+- কি আছে তোর? ছোট
বোনকে একটু শপিং এও নিয়ে যেতে না পারলে আর এত কষ্ট করে চাকরি করছি কেন?”
দাদার কথায় আপন ভাবটা এত প্রবল যে আপত্তি করার
কোন কারন পেলাম না। বহুদিন পর জীবনে ভাল লাগার মতো কিছু ঘটছিল
আমার। প্রচুর শপিং করে রাতে বড় রেস্টুরেন্টে খেয়ে ফিরলাম আমরা। অনেক শার্ট, টপ, জিন্স , জুতো,
চটি কিনলাম আমি। একটু বড় হওয়ার পর থেকেই আমার চুড়িদার বা শাড়ির
থেকে শার্ট- টপ- জিন্স- জুতো, এই টাইপের পোশাক পছন্দ। কিন্তু রক্ষনশীল বাড়িতে বেশিরভাগ সময়েই জোর
করত এসব না পরতে একটা কিশোরী মেয়ের টমবয় লুক আমার বাড়ির লোক বা প্রতিবেশীরা মেনে নিতে
পারত না। এখন থেকে নিজের ইচ্ছামত পোশাক পরতে কেউ বাধা
দেবে না বুঝতে পেরে বেশ ভাল লাগছিল।
পরদিন ছিল রবিবার। যেহেতু ফ্ল্যাটে শুধু আমি আর দাদা থাকব এখন
থেকে আর কাজের লোকও কেউ নেই, আমি ভেবেছিলাম
রান্নাসহ কিছু কাজের দায়িত্ব অন্তত আমার ঘাড়েই চাপবে। বিশেষ করে সপ্তাহে ৫ দিন বেশিরভাগ সময়টা দাদা
অফিসে কাটাবে, আর আমার জন্য যেখানে দাদা
এতটা করছে, এইটুকু তো আমাকে করতে হবে এটাই স্বাভাবিক। কিন্তু রবিবার সকাল নটায় ঘুম থেকে উঠে ফ্রেশ
হয়ে দেখি দাদা আমার জন্য ব্রেকফাস্ট নিয়ে হাজির। অথচ বাড়িতে মা আমাকে রান্না করার জন্য সবসময়
চাপাচাপি করত। এইজন্য নয় যে মা নিজে করতে চাইত না, বরং মেয়ে হয়ে রান্না না শিখলে বিয়ের পর অসুবিধা হবে এই ভেবে। আর এখানে ঠিক উল্টো, চিরাচরিত প্রথাগত যে জীবনকে আমি গভীরভাবে ঘৃণা করতে বাধ্য হয়েছি
এতদিন, তার ছোঁয়া এখানে একদমই নেই। দাদা নিজের টাকা খরচ করে আমাকে বেসরকারী ইঞ্জিনিয়ারিং
কলেজে পড়াবে, আমার থাকা- খাওয়া, শপিং সব টাকা দেবে। তারপরেও দাদা স্বেচ্ছায় নিজে থেকে আমার ঘুম
থেকে ওঠার আগেই আমার জন্য ব্রেকফাস্ট রেডি করে নিয়ে এসেছে! এতটা ভালবাসা জীবনে কখনও পেতে পারি আমি কল্পনাও করিনি। আমার চোখে জল এসে গেল প্রায়। আমি দাদাকে “থ্যাংক ইউ” বলে ব্রেকফাস্টের প্লেটটা নিয়ে
খেতে লাগলাম। দাদার কাছ থেকে এত ভাল ব্যবহার পেয়ে আমার বুকের
উপর জমে থাকা দুঃখের জমাট পাথরটা যেন কিছুটা আলগা হতে লাগল। খাওয়া শেষ হতে রান্নাঘরে গিয়ে দেখি দাদা রান্না
প্রায় সেরে ফেলেছে ততক্ষনে। এত সকালে বাজার-রান্না সব প্রায় শেষ! আমি অবাক হয়ে গেলাম। তারপর ভাবলাম ঘর পরিষ্কার, জামা কাচা সহ অন্য কাজ কিছু করে দিই। কিন্তু দাদা আমাকে কিছু করতে দিল না। আমাকে উল্টে বলল, “ তোর কাজ হল আমার উপর নজরদারী করা। কোন কাজ ঠিক নাহলে , বা কিছু বাকি থাকলে আমাকে ধরিয়ে দিবি শুধু। আমার ভ্যাকুয়াম ক্লিনার থেকে ওয়াশিং মেশিন
সবই আছে। তাই কাজ করতে অসুবিধার কিছুই নেই। তুই শুধু মন দিয়ে পরবি, আর লাইফ এঞ্জয় করবি। এটাই তোর আসল কাজ এই বয়সে”।
আমিও হাসিমুখে মেনে নিলাম দাদার কথা।এই নতুন লাইফ স্টাইল আমার বেশ ভালই লাগছিল। নিজেকে কিরকম রাজকন্যার মতো মনে হচ্ছিল আমার। আমি পায়ের উপর পা তুলে চেয়ারে বসে টিভি দেখতে
লাগলাম নতুন কেনা একটা টপ, বারমুডা আর
পায়ে নীল চটি পরে বসে। আর দাদা চাকরের মতো ঘর ঝাঁট দিল, তারপর ওয়াশিং মেশিনে কাপড় কাচতে দিল। কিন্তু এরপর আমি সত্যিই অবাক হলাম যখন দাদা
আমি যেই কিটোটা পরে বাড়ি থেকে এসেছি সেটা পরিষ্কার করতে বসল।
“ ঐ দাদা, করছিস কি?
তোকে আমার জুতো পরিষ্কার করতে হবে না। আমি করে নিচ্ছি”।
“ দাদা হাসিমুখে বলল কি হয়েছে বোনের জুতো
দাদা পালিশ করে দিলে? তুই আমার আদরের ছোট্ট বোন না? আগে তুই যখন ছোট্ট ছিলিস, আমরা একসাথে থাকতাম তখন তো
আমিই তোকে জুতো পরিয়ে দিতাম, তোর জুতো পালিশ করে দিতাম”।
“ তখন তো আমি অনেক ছোট ছিলাম। তখন করতিস বলে এখনও করতে হবে?”
“ প্লিজ বোন, করতে
দে”, দাদার চোখে যেন কাকুতির ভাব লক্ষ্য করলাম।
আমি ঠিক বুঝতে পারছিলাম না দাদাকে। এত টাকা খরচ করে আমাকে পড়াচ্ছে, আমাকে শপিং এ নিয়ে যাচ্ছে, তারপর আমাকে রাজকন্যার
মতো ঘরে বসিয়ে আমার সব কাজ চাকরের মতো করে চলেছে কেন? নিজের খুড়তুতো
বোনের জন্য কেউ কেন এত করবে?
তখনই আমার নিজের আগে ভাবা কথা মনে পরল। পৃথিবীতে সবাইকে একইরকম হতে হবে এরকম কোন কথা
নেই, প্রকৃতি ব্যতিক্রম পছন্দ করে!
যেই আচরনে কারো ক্ষতি হয় না, বরং তারসাথে যুক্ত
সবাই খুশি হয়, তা যতই অদ্ভুত মনে হোক, তাকে
বাধা দেওয়ার কোন যুক্তি নেই। যেকারনেই হোক দাদা আমার সেবা করে খুশি হচ্ছে, আমার জুতো পরিষ্কার করার জন্য ওর চোখে যেন আকুতি ঝরছে!
আর এতে আমারও কাজ কমছে! কেন আমি বাধা দিতে যাব
তাহলে দাদাকে ?
“ঠিক আছে দাদা, তুই
আমার জুতো পরিষ্কার করে দে”। আমি হাসিমুখে বললাম।
“ তুই নিজে কখনও জামা কাচা, জুতো পালিশ কিছু করবি না সীমা। এগুলো আমার ডিউটি। তোর কাজ হল পড়াশোনা করা, লাইফ এঞ্জয় করা। আর সাথে আমাকে কোন কাজে ফাঁকি দিতে দেখলে সেটা
ধরিয়ে দেওয়া”। দাদা আমার জুতো পালিশ করতে করতে বলল। আমি হাসিমুখে টিভি দেখতে
দেখতে আড়চোখে আমার ৭ বছরের বড় দাদাকে আমার জুতো পালিশ করতে দেখতে লাগলাম।
তিন……
দাদার
ফ্ল্যাটে আমার এক সপ্তাহ কেটে গেল দেখতে দেখতে। সত্যি, নিজের বিপর্যস্ত ভাব অনেকটা কাটিয়ে উঠেছি এই এক সপ্তাহে। সোম থেকে শুক্রবার দাদা সকালে ৬ টার মধ্যে উঠে পরে। রান্না করে, দরকার মত টুকটাক অন্য কাজ করে। তারপর রেডি হয়ে সকাল ৯ টার একটু আগে বেরিয়ে যায়। সারাদিনে আমাকে কিছুই করতে হয় না। দাদা
এর মধ্যেই আমাকে নতুন ল্যাপটপ আর ভাল মোবাইল গিফট করেছে। ল্যাপটপ
নিয়ে বা টিভি দেখেই সময় কেটে যায় আমার। নতুন শহরে এখনও বন্ধু কেউ নেই, তাই সকালে
মাঝে মাঝে একাই বেরিয়ে পরি। দাদার সৌজন্যে আমার ব্যাগে
টাকার কোন অভাব হয় না। সত্যি, এত স্বচ্ছলভাবে,
এত আরামে আমি জীবন কাটাতে পারব একমাস আগেও কল্পনা করতে পারিনি!
শুধু নেহার কথা ভাবলেই মনটা খারাপ হয়ে যায়। সত্যি, নেহাও যদি আমার সাথে এখানে থাকত আমার জীবনে
আর চাওয়ার কিছু থাকত না!
দাদা অফিস থেকে ছটার
মধ্যেই বাড়ি ফিরে আসে। তারপর ঘরের কিছু কাজ থাকলে করে আমাকে নিয়ে
বেরয়। কলকাতা আমার কাছে নতুন শহর, আমার ঘুরতে ভালই লাগে। কখনও শপিং এ নিয়ে যায় আমায়, কখনও মাল্টিপ্লেক্সে সিনেমা
দেখতে। তারপর বাইরে খেয়ে রাত ৯ টার দিকে ফ্ল্যাটে
ফিরি। ঘরে ঢুকে আমি বাইরের ঘরে সোফায় বসলেই দাদা
হাটুগেড়ে আমার পায়ের কাছে বসে পরে আমার জুতো মোজা খুলে দেওয়ার জন্য। আমি একবার বলেছিলাম, “ আমি বড় হয়ে গেছি রে দাদা,
নিজের জুতো আমি নিজে খুলতে পারি”।
“ জবাবে দাদা শুধু করুন
দৃষ্টিতে তাকিয়ে বলেছিল, “ প্লিজ বোন, এটুকু
করতে দে তোর জন্য, প্লিজ”।
এরপর দাদা আমার জুতো
মোজা খুলে দিয়ে পায়ে ঘরে পরার চটি পরিয়ে দিলে আমি নিজের ঘরে চলে এসে ল্যাপটপ খুলি। নতুন খোলা ফেসবুকে কিছু নতুন পরিচয় হওয়া বন্ধুদের
সাথে চ্যাট করতে থাকি। দাদাও নিজের ঘরে গিয়ে ঘুমানোর আগে একটু ল্যাপটপ
খোলে দেখি। হয়ত ফেসবুক করে, কি সিনেমা দেখে বা গেম খেলে। ঠিক জানি না।
শনি রবিবার দাদার ছুটি
থাকে অফিস। দাদার বেশি বন্ধু নেই এখানে লক্ষ্য করেছি। এই দুইদিন দাদা আমাকে নিয়ে অনেক জায়গায় ঘোরায়।
দেখতে দেখতে আরও দুই সপ্তাহ কেটে যায়
এইভাবে। দিন মোটামুটি ভালই কাটতে থাকে আমার। ইঞ্জিনিয়ারিং এর কাউন্সিলিং এ আমি একটি ভাল প্রাইভেট কলেজে ইলেক্ট্রনিক্স এন্ড টেলিকমিউনিকেশন ইঞ্জিনিয়ারিং
এ ভর্তি হয়ে যাই। কলেজ শুরু হতে তখনও প্রায় মাস খানেক বাকি। ফেসবুকের সুবাদে এরমধ্যেই আমার এই শহরে কিছু
বন্ধু বান্ধব হয়েছে, তাদের মধ্যে কয়েকজন আবার আমার কলেজেই ভর্তি হয়েছে। মাঝে মাঝে একসাথে ঘুরতে বেরোই। শুধু নেহার কথা ভাবলেই মন খারাপ হয়ে আসে। ওকে কলেজে ভর্তি হতে দেয়নি ওর বাড়ি থেকে। ওর যার সাথে বিয়ে ঠিক হয়েছে তাকে ওর একদমই
ভাল লাগেনি। শুধু মেয়েদের প্রতি আকর্ষন ভুলে একটা ছেলেকে
বিয়ে করতে হবে ওকে তাই নয়,সেটাও এমন একজনকে যে ওর চেয়ে অনেক বড়, ওর উপর কতৃত্ব
ফলাতে চায়, যাকে ওর একদম ভাল লাগে না। ফোনে নেহার কান্না শুনে আমারও ভেঙ্গে পরতে
ইচ্ছা হয় দুঃখে। ইশ, যদি এমন কোন উপায় থাকত সমাজ
আমাদের একসাথে থাকা মেনে নিত! আমরা সুখে এই ফ্ল্যাটে একসাথে থাকতে
পারতাম!
এরমধ্যে বর্ষাকালের তুমুল
বৃষ্টি শুরু হওয়ায় ঘর থেকে বিশেষ বেরোতে পারছিলাম না। এক শুক্রবার সকালে ঘরে বসে বোর হচ্ছি, মনে
হল কিছু সিনেমা দেখি। কাছেই এক সদ্য পরিচিত হওয়া বন্ধু থাকে, ওর কাছে অনেক মুভি
কালেকশন আছে। ভাবলাম তার কাছ থেকে কিছু সিনেমা নিয়ে আসি, ল্যাপটপে দেখব। তখনই
খেয়াল হল, আমার তো পেন ড্রাইভ নেই! তখন খেয়াল হল দাদাকে ল্যাপটপে পেন ড্রাইভ ইউজ
করতে দেখেছি। আমি দাদার ঘরে গিয়ে ড্রয়ার ঘেটে দুটো পেন ড্রাইভ পেলাম। কোনটায় বেশি
স্পেস আছে চেক করার জন্য নিজের ঘরে আনলাম। প্রথমটা দেখলাম ৮ জিবি স্পেসের পেন
ড্রাইভ , যেটা কয়েকটা সিনেমা আর গানে প্রায় ভর্তি। দ্বিতীয় পেন ড্রাইভটা লাগিয়ে
দেখি এটা ৬৪ জিবির পেন ড্রাইভ, যার মধ্যে প্রায় ২০ জিবি ভর্তি। খুলতে গিয়ে দেখি
অজস্র ফোল্ডার যার প্রায় সবই ফাঁকা। এত ফাঁকা ফোল্ডার কেন বিভিন্ন নামে?আমার
কৌতুহল বেড়ে গেল এই দেখে। আর কিছু না থাকলে ২০ জিবি ভরল কিসে? শেষে “ রিয়াল
ওয়ার্ল্ড বলে একটা ফোল্ডারে ক্লিক করতেই বাংলায় “ ক্রীতদাস ও প্রভুর জগত” বলে একটা
ফোল্ডার দেখতে পেলাম। এরকম অদ্ভুত নাম কেন ফোল্ডারের? কৌতুহলী হয়ে ক্লিক করতেই
দেখি “ প্রভু সেবার গল্প”, “ প্রভুসেবার ছবি” আর “ প্রভুসেবার ভিডিও’ বলে ৩ টে
ফোল্ডার। ছবির ফোল্ডারে ক্লিক করে খুলতেই চমকে গেলাম! একের পর এক ছবিতে শুধু
ছেলেরা চাকরের মত মেয়েদের সেবা করে চলেছে। কোথাও মেয়েরা হাসিমুখে গল্প করছে আর
ছেলেরা চাকরের মতো ঘরের কাজ করছে, কোথাও বা কোন মেয়ে নিজের জুতো পরা পা একটা ছেলের
মুখের উপর রেখে বসে টিভি দেখছে আর ছেলেটা ভক্তিভরে মেয়েটার পা টিপছে। এসব কি??
কৌতুহলী হয়ে একের পর
এক ছবি দেখে চললাম। কোথাও বয়স্ক লোক মেয়েদের স্কুলের সামনে বসে মেয়েদের স্কুলের
জুতো পালিশ করে দিচ্ছে। কোথাও কোন মেয়ে জুতো পরা পা দিয়ে একটা
ছেলের মাথা চেপে ধরে তার খালি পিঠে চাবুক মারছে। দাদার পেন ড্রাইভে এরকম ছবি কেন?
যত দেখতে লাগলাম ততই আশ্চর্য হতে লাগলাম।
এরপর গেলাম গল্পের
অংশটায়। ফোল্ডারটা বাংলা আর ইংরেজি গল্পে বিভক্ত। আমি বাংলায় ক্লিক করতে দেখতে
পেলাম ৩০০ র বেশি গল্প সেখানে। গল্পের টাইটেল গুলোয় চোখ বোলাতে লাগলাম। অন্তত ১০০
গল্পের টাইটেল , “ বোনের চাকর”, “ ছোট বোনের ক্রীতদাস”, “ আমার প্রভু বোন”, বা
এইরকম। নেহার প্রতি আমার টান যেমন সাধারন বন্ধুত্বের বাইরেও আরো কিছু, তেমনই দাদার
আমাকে সেবা করতে চাওয়ার মধ্যেও কিছু রহস্য আছে বুঝতে পারলাম। এক এক করে গল্প গুলো
খুলে চোখ বোলাতে লাগলাম, বিশেষ করে যেই গল্পগুলোর টাইটেল পরে দাদা বোনের সম্পর্ক
নিয়ে লেখা বলে মনে হচ্ছিল সেইগুলো।
প্রতিটা গল্পেই দেখলাম দাদা চাকরের মতো
ছোট বোনের সেবা করছে,আর ছোট বোন ইচ্ছামত দাদাকে ব্যবহার করছে। একটু আগে দেখা ছবির
মতো কোথাও বোন জুতো পরা পা দাদার মুখের উপর রেখে বসে দাদাকে দিয়ে পা টেপাচ্ছে ,
কোথাও বোন ইচ্ছামত চড়, লাথি মারছে দাদাকে। প্রতিটা গল্পেই দাদা চাকর, বা বলা ভাল
ক্রীতদাসের মতো সেবা করে যাচ্ছে ছোট বোনকে। এরমধ্যে অন্তত ৫ টা গল্প পড়ে রীতিমত
চমকে গেলাম! কারন গল্পের দাদা আর বোন আর কেউ না , আমি আর আমার দাদাই! গল্পে আমাদের
নাম, ঠিকানা, বাড়ির অন্যদের নাম পরিচয় সবই একদম এক। আর প্রতিটা গল্পেই সবার সামনে
প্রথমে দাদা চাকরের মতো আমার সেবা করছে, তারপর আমি দাদাকে ইচ্ছামত অর্ডার করছি ,
মারছি!
গল্পে দাদা আমাকে সম্বোধন করছে প্রভু বা দেবী
বলে , আর আমি দাদাকে কথায় কথায় কুত্তা, চাকর থেকে যা মুখে আসে বলে অপমান করছি!
এসব কি? এরকমও হয়
নাকি? কেউ কেন স্বেচ্ছায় অন্যের হাতে মার খেতে চাইবে, এইভাবে তার সেবা করতে চাইবে
সবার হাতে? কিভাবে কেউ আরেকজনের পায়ের তলায় নিজের মাথা নামিয়ে দিয়ে, তাকে প্রভু
বলে ডেকে সুখ পেতে পারে? বিশেষ করে সে যদি নিজের বোন হয়? কিভাবে এত ভাল চাকরি করা
দাদা নিজের সাত বছরের ছোট অসহায় কিশোরী বোনকে নিজের প্রভুরুপে ভাবতে পারে?
সিনেমা দেখার কথা আর
মাথাতেই রইল না আমার । চুপ করে শুয়ে ভেবে যেতে লাগলাম কি করে এটা সম্ভব? কিছুতেই
সেটা বুঝতে না পারলেও কয়েক ঘন্টা পরে আমার মাথাতে একটা চিন্তাই এল। প্রকৃতি
ব্যতিক্রম পছন্দ করে ! যারা স্বাভাবিক তারা ভাবে আমার মত কিছু মানুষ কি করে বিপরীত
লিঙ্গের মানুষের বদলে সমলিঙ্গের প্রতি আকৃষ্ট হয়? কি করে এটা সম্ভব ? তারা না
চেষ্টা করে আমার মতো মানুষকে বুঝতে , না চেষ্টা করে এর পিছনের বিজ্ঞানকে জানতে।
শুধু রক্ষনশীল মানসিকতা নিয়ে আমাদের নিরীহ ভালবাসাকে সুতীব্র আক্রমনে জর্জরিত করে।
আমি দাদার প্রতি এর কোনটাই করব না ঠিক করলাম। ও কি চায়, কেন চায়, কি করলে ও খুশি
হয় তা মন দিয়ে শুনব। যে দাদা আমাকে এত ভালবাসে, আমার জন্য এত কিছু করছে তার জন্য
এটুকু তো করতেই হবে। আর এর পিছনের যে বিজ্ঞান সেটাও পরে জানতে হবে সময় নিয়ে। কেন
আমি বা নেহা এরকম? কেনই বা দাদা এরকম ? ঠিক কি কারনে আমাদের মধ্যে এই তথাকথিত
অস্বাভাবিকতা সেটা সঠিকভাবে জানতেই হবে।
দাদা অফিস থেকে ঘরে
ফিরল প্রায় সাড়ে ছটায়। আমি তখন চেয়ারে বসে টিভি দেখছি। একটু দেরী হয়েছে বলে দাদা
বাইরে থেকে টিফিন কিনে এনেছে। ও ফ্রেশ হয়ে একটা প্লেটে করে টিফিন এনে আমার হাতে
দিয়ে বলল, “ চল, খেয়ে নিয়ে একটু বেরোই। বৃষ্টি থেমেছে”।
আমি দাদার হাত থেকে
প্লেট নিয়ে খেতে লাগলাম। কিন্তু দাদার কথার কোন জবাব দিলাম না, চুপচাপ খেতে
লাগলাম।
দাদা একটু অবাক হল
উত্তর না পেয়ে। “ কি হয়েছে সীমা, উত্তর দিচ্ছিস না কেন”?
আমি তারপরেও কোন
জবাব না দিয়ে চেয়ারে পায়ের উপর পা তুলে
বসে টিভি দেখা চালিয়ে গেলাম খেতে খেতে। শুধু দাদার দিকে কঠোর দৃষ্টিতে তাকালাম
একবার।
দাদা বেশ ভয় পেয়ে
গেল আমার আচরনে। আমার পায়ের কাছে হাটুগেড়ে বসে পরে বলল, “ কি হয়েছে রে বোন, কথা
বলছিস না কেন? আমি কি কোন দোষ করে ফেলেছি? প্লিজ বোন উত্তর দে, কি ভুল করেছি আমি”।
দাদাকে আমার পায়ের কাছে হাতজোর করে বসতে দেখেও
আমি চুপচাপ খাওয়া চালিয়ে গেলাম। আমি এখন জানি দাদা নিজের কল্পনায় আর নিজের লেখা
গল্পে বহুবার এইভাবে আমার সামনে নতজানু হয়ে অনেক অনুরোধ করেছে!
খাওয়া শেষ করে আমি
প্লেটটা দাদার হাতে ধরিয়ে দিলাম। দাদা প্লেটটা মেঝেতে রেখে আমার দিকে হাতজোড় করে
বলল, “ এইবার প্লিজ বল সীমা, আমি কি ভুল করেছি?”
আমি আসতে করে নিজের
বারমুডার পকেটে হাত ঢুকিয়ে দাদার পেন ড্রাইভটা বার করে ওর মুখের সামনে ধরলাম।
“ এটা কি? এতে কি
আছে?”
দাদার মুখটা প্রায়
ফ্যাকাশে হয়ে গেল ওই পেনড্রাইভটা আমার হাতে দেখে। একবার কি যেন বলতে গিয়ে থেমে
গেল। তারপর মাথা নিচু করে বারাবার বলতে লাগল, “ আমি সরি বোন, আমি এক্সট্রিমলি
সরি”।
আমার অবাক লাগতে
লাগল ভিশন। যে দাদার দয়ায় আমি কলকাতায় থেকে প্রাইভেট ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজে পড়ার
সুযোগ পেয়েছি, সে এই তুচ্ছ কারনে ভয়ে আমার চোখের দিকে তাকাতে পারছে না। এমনভাবে
আমার কাছে ক্ষমা চাইছে যেন ও আমার উপর নির্ভরশীল, আমার দয়ায় আমার আশ্রয়ে থাকে।
অথচ, আসলে সত্যিটা তো ঠিক উল্টো!
দাদা ভাবছে আমি ভিশন
রেগে গিয়েছি সেটা বুঝতে পারলাম। আমি ঠিক করলাম আরেকটু রাগ দেখিয়ে নিই দাদার সাথে
খোলাখুলি কথা বলার আগে। এতে দাদার কি রিয়াকশন হয় সেটা দেখতে খুব ইচ্ছা করছে।
আমি ইচ্ছা করেই
দাদার বাঁ গালে ডান হাত দিয়ে একটা থাপ্পর মেরে বললাম, “ এসব কি, এসবের মানে কি?”
দাদা নিজের মাথাটা
ঠিক আমার পায়ের কাছে মেঝেতে ঠেকিয়ে করুন স্বরে আমার কাছে বারবার ক্ষমা চাইতে লাগল
জবাবে। “প্লিজ সীমা, আমাকে ক্ষমা করে দে। প্লিজ, প্লিজ”।
জবাবে আমি নিজের
কালো চটি পরা ডান পা টা তুলে ঠিক দাদার মাথার উপরে রাখলাম। নিজের চটি পরা পা আমি
নিজের সাত বছরের বড় দাদার মাথার উপরে তুলে বসে আছি আর দাদা আমার কাছে ক্ষমা চাইছে
ভাবতেও অবাক লাগতে লাগল!
দাদা একইরকম স্বরে
আমার কাছে ক্ষমা চেয়ে যেতে লাগল আর আমি নিজের চটির তলাটা দাদার মাথার উপর বোলাতে
লাগলাম আসতে আসতে।
দাদা নিজের মাথাটা মেঝেতে আমার পায়ের কাছে
রেখে আমার কাছে ক্ষমা চাওয়া চালিয়ে যেতে লাগল। বারবার ওর মুখ থেকে আমার
প্রতি “প্লিজ, আমাকে ক্ষমা করে দে বোন” টাইপের অনুরোধ ভেসে আসতে লাগল। আর আমি
দাদার মাথার উপরে আমার চটি পরা পায়ের তলা বোলাতে লাগলাম। একটু পরে দাদার মাথার
উপরে একটা লাথি মেরে ওকে আদেশ দিলাম, “ উঠে বস দাদা”।
দাদা সাথে সাথে আমার পায়ের কাছে হাটুগেড়ে হাতজোড় করে বসল। আমি দাদার মুখের
উপরে আমার কালো চটি পরা বাঁ পা দিয়ে একটা লাথি মারলাম প্রথমে, তারপর চটি পরা ডান
পা দিয়ে আরেকটা। দুটো লাথিই দাদার নাক আর ঠোঁটের উপরে আছড়ে পরল বেশ জোরে। দাদা
একবারও বাধা দেওয়ার চেষ্টা করল না আমাকে, আমার পায়ের কাছে হাটুগেড়ে হাতজোড় করে বসে
দাদা বিনা প্রতিবাদে আমাকে ওর মুখে লাথি মারা চালিয়ে যেতে দিল! আমি দাদার মুখে
এরপর চটি পরা বাঁ পা দিয়ে পরপর দুটো লাথি মারলাম, তারপর চটি পরা ডান পা দিয়ে বেশ
জোরে একটা লাথি মারলাম দাদার নাকের উপরে। দাদা এবার আর সহ্য করতে পারল না, মেঝেতে
চিত হয়ে পরে গেল। আমি সাথে সাথে দাদার
মাথার কাছে রাখা ডানহাতের তালুর উপরে নিজের চটি পরা বাঁ পা টা তুলে দিলাম, আর চটি
পরা ডান পা টা রাখলাম দাদার ঠোঁটের উপরে। দাদার ঠোঁটের উপরে আমার কালো চটির তলাটা
আমি বেশ জোরে ঘষতে লাগলাম। আর দাদা জবাবে আমার ডান চটির তলাটা ওর বাঁ হাত দিয়ে
নিজের মুখের সাথে চেপে ধরে বারবার আমার চটির তলায় চুম্বন করতে করতে আমার কাছে
ক্ষমা চাওয়া চালিয়ে যেতে লাগল। দাদার ফ্ল্যাটে দাদার কিনে দেওয়া পোশাক আর চটি পরে
সেই চটি পরা পায়ের তলা আমি দাদার মুখে ঘসছি, আর দাদা জবাবে আমার চটির তলায় চুম্বন
করে আমার কাছে ক্ষমা চাইছে ভাবতেই অবাক লাগল।
দাদা যে ভয় পেয়েছে সেটা ওর আচরনে মনে হচ্ছিল। সেই সাথে কি একটু খুশিও হয়েছে
ছোট বোন সত্যিই ওকে এইভাবে ক্রীতদাসের মতো ব্যবহার করায়? ঠিক নিশ্চিত হতে পারলাম
না। তবে এবার সময় হয়েছে আদার সাথে খুলে কথা বলার।
আমি দাদার মুখের উপর থেকে নিজের চটি পরা ডান পা টা তুলে নিলাম ১০ মিনিট পর ।
তারপর চেয়ারে বসে দাদাকে ডাকলাম কাছে। দাদা এসে ঠিক আমার পায়ের কাছে বসল। আমি
দাদার কোলের উপরে আমার চটি পরা পা দুটো তুলে দিলাম। দাদা বাধ্য চাকরের মতো আমার পা
দুটো টিপতে লাগল মাথা নিচু করে। দাদা এখনও আমার চোখের দিকে তাকানোর সাহস পাচ্ছে না
বুঝতে পারলাম।
“ সরি সীমা, আমাকে প্লিজ এবারের মতো ক্ষমা করে দে। তুই যা শাস্তি দিবি আমি তাই
মাথা পেতে নেব। আমি জীবনে আর কখনো এরকম গল্প বা ভিডিও দেখব না, জীবনে কখনও আর
ল্যাপটপ ধরব না। প্লিজ বোন এবারের মতো ক্ষমা করে দে”।
দাদা বাধ্য চাকরের মতো আমার পা টিপতে টিপতে আমাকে অনুরোধ করে চলল।
জবাবে আমি মাথা নিচু করে আমার পায়ের কাছে বসে পা টিপতে থাকা ৭ বছরের বড়
জেঠতুতো দাদার কপালে একটা চুমু খেলাম। তারপর ওর মাথাটা আমার হাঁটুর উপরে রেখে ওর
চুলে হাত বোলাতে বোলাতে বললাম,” তোকে অকারনে মারলাম বলে রাগ করেছিস দাদা”?
“ অকারনে কেন হবে বোন। আমি তো অপরাধ করেছি। আর বিনা কারনেও তুই আমাকে যখন খুশি
মারতে পারিস”। দাদা বাধ্য চাকরের মতো আমার পা টিপতে টিপতে বলল।
“ ধুস। তুই নিজের কল্পনা মতো কোথাও কিছু লিখলে বা পরলে তাতে অপরাধের কি আছে?
আর মানুষে মানুষে ভাললাগার পার্থক্য তো থাকবেই। কিন্তু তুই আমাকে খুলে বলবি তোর সব
কথা। তোর কি ভাল লাগে, কবে থেকে ভাল লাগে , কেন ভাল লাগে। আমি তোর ছোট বোন অই, আমাকে বলবি না তো কাকে বলবি?” আমি
দাদার কপালে , চুলে হাত বোলাতে বোলাতে বললাম।
দাদা মাথা নিচু করে রইল কিছুক্ষণ , দেখলাম ও যেন একটু বেশি ঘামছে। একটু পরে ও
বলতে শুরু করল। আমি মাঝে মাঝে ওকে থামিয়ে প্রশ্ন করতে লাগলাম কিছু জানার থাকলে।
দাদার কথা শেষ হলে ওকে মোটামুটি বুঝতে
পারলাম । সত্যি , প্রকৃতি ব্যতিক্রম পছন্দ করে! ছোট থেকেই ওর মেয়েদের সেবা করতে
ভাল লাগে, কেন ও নিজেও জানে না। ছোট থেকেই সবার মতো ও শুনেছে যে খারাপ ছেলেরা
মেয়েদের মারে, মেয়েদের সাথে খারাপ ব্যবহার করে। ওর নিজের মন এর উল্টোটাকে কোন এক
অজানা কারনে সত্যি বলে ধরে নিয়েছিল ওর বয়স দুই অংকে পড়ার আগেই। ভাল ছেলে মাত্রই
মেয়েদের সেবা করে, মেয়েরা মারলে বিনা প্রশ্নে সেটা মেনে নেয় এই ধারনা কোন কারনে
গেঁথে গিয়েছিল ওর মনে। ও চাইত ভাল ছেলে হতে। সেই জন্যই আমি একটু বড় হওয়ার পর ও আমার সব কথা বিনা
প্রশ্নে মেনে নিত, আমার অগোছাল ঘর গোছানো, জামা কেচে দেওয়া , জুতো পরিয়ে বা পালিশ
করে দেওয়া সব স্বেচ্ছায় খুশি হয়ে করত। নিজে ভাল ছেলের কর্তব্য করছে ভেবে ওর মন
খুশি হয়ে উঠত।
ও চেয়েছিল এইভাবে আমার সেবা করা চালিয়ে যেতে। কিন্তু ওর বাবা বদলি হয়ে চলে
যাওয়ায় সেটা আর সম্ভব হয়নি বেশিদিন। আর ওকেও পড়াশোনা নিয়ে ব্যস্ত হয়ে পরতে হয়।
কিন্তু ওর মনে মাঝে মাঝেই ভেসে উঠত মেয়েদের সেবা করার স্বপ্ন, বিশেষ করে ওর ছোটবোন
আমার সেবা করার স্বপ্ন। ওর মনে হত জীবনে ও সবচেয়ে খুশি হবে যদি সারাজীবন সবার
সামনে চাকরে মতো আমার সেবা করতে পারে!
ওর বন্ধু বান্ধব চিরদিনই একটু কম। ও নেশা করে না, মেয়েদের নিয়ে খারাপ আলোচনা
হলে অস্বস্তি বোধ করে। ছেলেরা হোস্টেলে
খারাপ ভিডিও দেখত মাঝে মাঝেই, ওর ভিশন অস্বস্তি হত, কারন ও অন্যরকম। অথচ সেটা
কাউকে ও খুলে বলতে পারত না। ফলে ও বন্ধুদের অনেকটাই এড়িয়ে চলত চিরদিন। এখন ওর ভাল
চাকরি আছে, কিন্তু ভবিষ্যত সম্পর্কে ও কোন পরিকল্পনাই করতে পারে না। কারন ও যে
অন্যরকম। ওর যে শুধু ইচ্ছা করে চাকর হয়ে কোন মেয়ের সেবা করে জীবন কাটাতে, বিশেষ
করে সেই মেয়ে আমি এই চিন্তা করতে ওর ভিশন ভাল লাগে।
দাদার কথা শেষ হতে ঘড়ির দিকে তাকিয়ে দেখি
রাত ৮.৩০ টা বাজে। দাদা কথা বলতে বলতে তখনও ওর কোলের উপরে রাখা আমার চটি পরা পা
দুটো ভক্তিভরে টিপে চলেছে। আমার খেয়াল হল আমি সন্ধ্য্যয় টিফিন করলেও দাদা আমার চড়
আর লাথি ছাড়া আর কিছু খায়নি! কাল দাদার ছুটি, তাই আজ রাতে শোয়ার ব্যাপারে তাড়ার
কিছু নেই । আমি ঠিক করলাম, আমার নিজের সব সমস্যার কথা দাদাকে খুলে বলব। দাদাকে যে
আমি চোখ বন্ধ করে ভরসা করতে পারি, ও যে নিজে মরে গেলেও আমাকে জীবনে সামান্য কষ্ট
পেতে দিতে চাইবে না সেটা নিয়ে আমার আর কোন সন্দেহ ছিল না। এরকম দাদা পাওয়া সত্যিই
ভাগ্যের ব্যাপার। আমি ঠিক করলাম দাদার সাথে নিজের কথা সব শেয়র করব, তাতে অন্তত
বুকের দুঃখের বোঝা একটু হালকা হবে।
“ ওই দাদা, তুই টিফিন করে আয় যা। আমারও অনেক সমস্যা আছে, তোর চেয়েও অনেক বেশি।
আমি তোকে ছাড়া আর কাকে ভরসা করে বলতে পারি বল? যা, খেয়ে আয় আগে”।
দাদা টিফিনের প্লেট এনে আবার আগের মতো আমার পায়ের কাছে বসল। আমি দুষ্টুমি করে
আমার চটি পরা বা পা টা দাদার খাবারের প্লেটের উপরে তুলে দিলাম। আর ডান পা টা
রাখলাম দাদার কোলে। দাদ আমার চটির তলায় মাড়ানো খাবার বিনা প্রতিবাদে হাসিমুখে খেতে
খেতে আমার ডান পা টা টিপে দিতে লাগল। আর আমি শুরু করলাম নিজের বুকের ভার কমানোর
কাজ। শুরু থেকে সব বলতে লাগলাম দাদাকে। আমার কথা, নেহার কথা, আমাদের অন্যরকম হওয়া
আবিষ্কারের কথা। আমাদের বাড়িতে আমাদের নিয়ে আশংকার কথা, নেহার উপরে অত্যাচার থেকে
ওর বিয়ে ঠিক করে দেওয়া সবই। যখন শেষ করলাম তখন খেয়াল করলাম আমার চোখ দিয়ে টপ টপ
করে জলের ফোঁটা গড়িয়ে পরছে। দাদা ততক্ষনে একটা চেয়ার এনে আমার পাশে বসেছে। আমি
নিজের ভারাক্রান্ত মাথা দাদার কাঁধে রাখলাম। দাদা আমার মাথায় পরম আদরে হাত বুলাতে
বুলাতে বলল, “ তুই নেহাকে বল কলকাতায় চলে এসে কলেজে ভর্তি হতে। ওর ইঞ্জিনিয়ারিং
পড়ার লোনের ব্যাবস্থা আমি করে দেব। ও এখানেই থাকবে আমাদের সাথে, অন্য খরচ দেওয়ার
জন্য আমি তো আছিই। আর সেকেন্ড কাউন্সিলিং এ ও ভাল কোন কলেজে চান্স পেয়ে যাবে, তুই
চিন্তা করিস না”।
আর দি কুড়ি পরই ওর ১৮ বছর বয়স হয়ে যাবে, তখন ও এখানে এসে কলেজে পড়ার জন্য থাকলে ওর
বাড়ির কেউই ওকে বাধা দিতে পারবে না। তবে এঁকে ফ্ল্যাটে দাদা আর ওর থাকা নিয়ে যদি
এলাকায় কেউ কিছু বলে? এখানে না হলেও আমাদের বাড়িতে গিয়ে ওর বাড়ির লোকে বলতেই পারে!
যাক, সে তখন দেখা যাবে। নেহা তো ওর নরক ভবিষ্যতের হাত থেকে বাঁচবে এখন। সত্যি, এত্ত
ভাল একটা দাদা না থাকলে কি যে হত আমাদের!
নেহাকে সাথে সাথে ফোন করে জানালাম আমাদের
প্ল্যান। আমি বললাম, তুই চাকরি পাওয়ার পর নাহয় দাদার টাকা শোধ করে দিস। নেহা
প্রথমে আপত্তি করলেও শেষে রাজি হয়ে গেল।
রাতে খাওয়া দাওয়ার পর শুয়ে পরলাম। সারারাত
আমার মাথায় বিভিন্ন চিন্তা ঘুরতে লাগল। এখন নাহ্য নেহার বিয়ে ভাঙ্গা গেল, নেহার
পড়ার ব্যবস্থা করা গেল? কিন্তু এরপর কি হবে? আমাদের দেশের আইনে তো দুই মেয়ের বিয়ে
স্বীকৃত না, কিভাবে এত সামাজিক বাধা পেরিয়ে আমরা একসাথে থাকব তারপর? দাদারই বা কি
হবে ভবিষ্যতে? ও যেভাবে মেয়েদের সেবা করে জীবন কাটাতে চায় সেটা কিভাবে সম্ভব হবে?
সমাজের চোখে তো সেটাও বিকৃতি! কিভাবে সমাজের চোখে ধুলো দিয়ে আমরা সেভাবে জীবন
কাটাব যেভাবে প্রকৃতি চায়?
ভোররাতে একটা অদ্ভুত চিন্তায় ঘুম ভেঙ্গে
গেল? সত্যি তো, এরকম যদি হয়? দাদাকে বলতে একটু অস্বস্তি হবে ঠিকই, কিন্তু এরচেয়ে
ভাল আমাদের ৩ জনের পক্ষেই আর কিছু হতে পারে না।
চার......
ঘড়ির কাঁটায় তখন সবে ভোর ৫ টা ১০ বাজে। আমি দাদার ঘরে গিয়ে দাদার মাথা ঝাঁকিয়ে
ওকে ঘুম থেকে তুললাম। তারপর আমার পরিকল্পনার কথা বললাম ওকে। ও শুধু রাজিই হল না, ওর
চোখে মুখে, ওর কথায় এক অস্বাভাবিক খুশি ঝিলিক দিচ্ছিল। দাদা চায় আমাকে বা অন্য কোন মেয়ে যাকে ও বিশ্বাস করতে পারে,
ভালবাসে, তাকে সারাজীবন প্রভুর মতো সেবা করতে। অথচ সমাজ এটা অস্বাভাবিক বলবে মেনে নেবে
না। আর আমি ও নেহা চাই পরস্পরকে ভালবেসে দম্পতির মতো সারাজীবন একসাথে কাটাতে। সমাজের
চোখে সেটা আরও অস্বাভাবিক , সমাজ, আইন কেউই এটাম মেনে নেবে না এইদেশে। কিন্তু যদি আমার
পরিকল্পনা মতো দাদা সবাইকে বোঝায় যে ও নেহাকে ভালবেসে বিয়ে করতে চায় তাহলে? দাদার মতো
মেধাবী ছেলে আমাদের ছোট শহরে তো দূর, সারা জেলাতেও আর নেই সম্ভবত। যতই নেহার বিয়ে ঠিক
হয়ে যাক, বা লোকের ভালবাসার সম্পর্ক নিয়ে আপত্তি থাকুক, এত ভাল ছেলে পেলে ওর বাড়ির
লোকেও মেনে নেবে ঠিক। আর নাহলে বাড়ির অমতে বিয়ের সুযোগ তো আছেই !
দাদার সাথে নেহার বিয়ে হলে কেউ আর আমাকে আর নেহাকে নিয়ে সন্দেহ করবে না। বিয়ের
পর আমি দাদা আর নেহাবৌদির সাথে এই ফ্ল্যাটে থাকব পড়ার জন্য, এটাও কারো অস্বাভাবিক লাগবে
না! আসলে যে নেহা আর আমি এখানে দম্পতর মতো কাটাব আর দাদা আমাদের চাকরের মতো সেবা করে
নিজের ইচ্ছা পুরন করবে সেটা কেই বা জানছে! সত্যি, ৩ জনের পক্ষেই এর চেয়ে ভাল প্ল্যান
আর কিছু হয় না! আনন্দে আমি দাদাকে জড়িয়ে ধরল্ম একবার , তারপর কিভাবে এগোব পরিকল্পনা
করে রেডি হয়ে চললাম জেঠুর বাড়ির উদ্দেশ্যে। দাদা এক সপ্তাহ ছুটি নিয়ে নিল অফিসে। আমরা
ঠিক করলাম দাদা আর নেহার লাভ স্টোরি (!) প্রথমে জেঠুর বাড়িতে জানিয়ে তারপর আমাদের বাড়ি
গিয়ে বলব।
সবকিছু
মসৃণভাবে এগোতে লাগল এরপর। জেঠু – জেঠি দাদার ভালবাসার (!) কথা শুনে ভিশন খুশি হল,
আমি আমার মোবাইলে নেহার ছবি দেখালাম জেঠু জেঠিকে। সেই মেয়ের অন্যত্র বিয়ে ঠিক হয়েছে
শুনে ঠিক করল নিজেরা গিয়ে তাদের বাড়িতে কথা বলবে। সবাই মিলে বিকালের মধ্যেই আমাদের
বাড়িতে এলাম। আমার বাব মাকেও একই কথা জানানো হল। মা সব শুনে আমাকে আলাদা ডেকে জিভ কেটে
প্রায় ক্ষমা চাইল নেহা আর আমার সম্পর্কে পাড়ার গুজবে বিশ্বাস করার জন্য। মা- বাবা নাকি
একবারের জন্যও আন্দাজ করতে পারেনি আসলে নেহার সাথে ভালবাসার সম্পর্ক বহুবছর আগে এলাকা
ছেড়ে চলে যাওয়া আমার মেধাবী দাদার!
ঠিক
হল নেহার বাড়িতে গিয়ে জেঠু-জেঠি আর বাবা কাল সকালে কথা বলবে। রাজি না হওয়ার কোন কারন
নেই। আইআইটি থেকে পাশ করা মোটা মাইনে পাওয়া মেধাবী পাত্রকে কোন নিম্ন মধ্যবিত্ত পরিবার
কি আর না বলতে পারে? রাতে নিজের ঘর থেকে ফোন করে আমি নেহাকে আমাদের প্ল্যান উপর উপর
জানিয়ে রাখলাম। দাদা আসলে কি চায়, কেন চায় সেটা যেহেতু এত সহজে বোঝানো সম্ভব না তাই
শুধু এটা বললাম দাদার সাথে বিয়ের বাহানা করে তুই আমি একসাথে থাকার প্ল্যান করেছি আমি
আর দাদা মিলে। তুই আমাকে ভরসা করে দেখ, সব ঠিক হয়ে যাবে।
আমাদের
ভাবনা একদমই ঠিক প্রমান হল। নেহার বাড়িতে সানন্দে রাজি হয়ে গেল । আমার বাবার কাছে ওর
বাবা বরং দুহখপ্রকাশ করে বলল, “ পাড়ার লোকে গুজব রটাত আপনার মেয়ে আর আমার মেয়ের মধ্যে
নাকি অন্যরকম সম্পর্ক। এতদিনে বুঝতে পারছি এলাকার সবচেয়ে মেধাবী ছেলের সাথে আমার মেয়ের
সম্পর্ক সহ্য করতে না পেরেই হিংসায় লোকে এই গুজব রটাত। আর আমরা বোকার মতো সেটা অনেকটা
বিশ্বাস করে নেহাকে আপনার মেয়ের সাথে বেশি মিশ্তে বাধা দিতাম। নেহাকে জানাবেন আমরা
খুব লজ্জিত এর জন্য। আর যার সাথে ওর বিয়ের কথা চলছিল তাকে আমরা জানিয়ে দেব মত পরিবর্তনের
কথা। আপনারা কিছু ভাববেন না। যখন আপনারা চাইবেন তখনই আমরা বিয়েতে রাজি”।
শেষ
পর্যন্ত নেহার ১৮ পুর্ন হওয়ার পর প্রথম তিথিতেই ওদের বিয়ে হবে। আর নেহা তারপর আমাদের
সাথে ফ্ল্যাটে থেকে প্রাইভেট কলেজে ইঞ্জিনিয়ারিং পড়তে ভর্তি হবে পরের কাউন্সিলিং এ।
সব
কিছু সিনেমার মতই সুন্দরভাবে এগোতে লাগল এরপর। একমাসের মধ্যেই দাদা আর নেহার বিয়ে হয়ে
গেল। আমার একটুও খারাপ লাগল না। সত্যি বলতে, নেহা আর দাদা যদি সত্যি একে অপরকে ভালবেসে
ফেলে কখনও তাও হয়ত আমার সেরকম খারাপ লাগবে না। আমি দাদা আর নেহা দুজনকেই ভিশন ভালবাসি,
ওদের সুখের জন্য আমি সবই করতে পারি!
দাদা,
নেহা আর আমি ফ্ল্যাটে ফিরে আসার ৩ দিন পর নেহাও সেকেন্ড কাউন্সিলিং এ আমার কলেজে একই
ডিপার্টমেন্টে ভর্তি হয়ে গেল। আমরা আবার শুধু একইসাথে পড়ব তাই না, একসাথে এক ফ্ল্যাটে
থাকব, যা খুশি করব ভালবেসে, কেউ আমাদের বাধা দিতে আসবে না! সত্যি, এত সুখ জীবনে কখনও
আসতে পারে যেন কল্পনাও করতে পারছিলাম না আমি।
নেহার
যেদিন কাউন্সিলিং ছিল সেটা একটা শুক্রবার। দাদা অফিসে ছুটি নিয়েছিল সেদিন। কাউন্সিলিং
হয়ে যাওয়ার পর বাইরে খেয়ে আমরা ৩ জনে ফ্ল্যাটে ফিরলাম একসাথে। ততদিনে নেহাকে বুঝিয়ে
বলেছি দাদা ঠিক কিরকম, কিসে ও খুশি হয়। নেহা প্রথমে একটু অবাক হয়েছিল, পরে দিব্বি মানিয়ে
নিয়েছে। আমি যখন দাদাকে হুকুম করি বা মারি নেহা তখন হাসিমুখে দেখে আমাদের। হয়ত ভবিষ্যতে
ও একইরকম আচরন করবে আইনত ওর বরের সাথে!
সেদিন ফ্ল্যাটে ফিরে আমি আর নেহা বাইরের ঘরের সোফায় বসলাম।
দাদা আমাদের পা ধোয়ার জল, গামছা আর ঘরে পরার
চটি এনে আমাদের পায়ের কাছে হাটুগেড়ে বসল। আমি আর নেহা ততক্ষনে হাত ধরাধরি করে বসে পরস্পরের
দিকে চেয়ে আছি। আমাদের কতদিনের স্বপ্ন সত্যি
হয়েছে ভাবতেই এক দারুন আনন্দ হচ্ছে। আমি দাদাকে আদেশ করলাম আমার পায়ের তলায় শুয়ে পরতে
। দাদা আমার পায়ের তলায় শুতেই আমি আমার সাদা স্নিকার পরা পা দুটো দাদার মুখের উপরে
তুলে দিলাম। বাঁ স্নিকারের তলা দিয়ে ঢেকে দিলাম দাদার চোখ আর ডান স্নিকারের তলা দিয়ে
দাদার ঠোঁট দুটো ঘসতে লাগলাম। দাদা আমার পা দুটো টিপতে লাগল ভক্তিভরে আর আমি নেহার
ঠোটে নিজের ঠোঁট ডুবিয়ে দিলাম। আমার নোংরা স্নিকারের তলা দুটো দাদার মুখের উপরে ঘসতে
ঘসতে নেহার ঠোঁট চুম্বনে চুম্বনে ভরিয়ে দিতে লাগলাম।
একটু পরে আমি আর নেহা ঊঠে দাঁড়ালাম। আমি আমার হাত
দিয়ে নেহার কোমড় জড়িয়ে ধরলাম। আমার ঠোঁট তখনও নেহার ঠোটে ডোবানো। আমি নিজের জুতো পরা বাঁ পা দাদার চোখের উপর থেকে
নামালাম। আমার জুতো পরা ডানপা তখনো দাদার ঠোঁটের উপরে। দাদা কিছুক্ষনের জন্য দেখতে
পেল তার ‘ বউ’ এর ঠোঁটে ঠোঁট ডুবিয়ে ছোটবোনের চুম্বন দৃশ্য। জবাবে দাদা নিজের দুইহাত
দিয়ে আমার জুতো পরা ডান পা টা টেনে নিলে নিজের ঠোঁটের উপরে। আমার নোংরা সাদা স্নিকারের
তলায় একের পর এক গাঢ় চুম্বন করে আমাকে ধন্যবাদ দিতে লাগল যেন দাদা। পরক্ষনেই নেহাও
নিজের জুতো পরা ডান পা তুলে দিল দাদার মুখে,
নিজের জুতো পরা ডান পা দিয়ে আবার ঢেকে দিল দাদার চোখজোড়া। আমি আর নেহা পরস্পরকে জড়িয়ে
ধরে চুম্বন চালিয়ে যেতে লাগলাম পরস্পরের ঠোঁটে। আর দাদা একইরকম আগ্রহ ও ভক্তি নিয়ে
চুম্বন করতে লাগল আমার নোংরা জুতোর তলায়।
এরপর
শুধু সুখ আর সুখই রইল আমাদের জীবনে। আমার আর নেহার একসাথে দম্পতির মতো থাকার স্বপ্ন
সফল হল। দাদারও আমাকে প্রভু বলে ডাকার , ক্রীতদাসের মতো আমার সেবা করার স্বপ্ন পুর্নতা
পেল। দাদা আমার আর নেহার চাকরের মতই সেবা করে চলল, আর আমরা রাজকন্যার মতো কোন কাজ না
করে সারাদিন দাদাকে হুকুম করার কলা আয়ত্ব করে ফেললাম। তিনজনেই ভিশন সুখে, আনন্দে দিন
কাটাতে লাগোলাম আমরা। হব নাই বা কেন? আমাদের তিন জনেরই জীবনের সবচেয়ে বড় স্বপ্ন সফল
হয়েছে যে!!
( সমাপ্ত)।
Mild femdom, but good quality meaningful and emotional story. Thank you for this.
ReplyDelete