Sunday 1 July 2012

সাবমিসিভ বা ফেটিশিসম আছে এরকম অনেকের মনেই এই প্রশ্ন আসে, এটা কি রোগ, disease? এর জন্য কি চিকিতসা নেওয়া প্রয়োজন? 
এর জন্য প্রথমে বুঝে নেওয়া দরকার এগুলো কি। চিকিতসা বিজ্ঞানে এরকম প্রায় ৫৫০ ভিন্নধর্মী যৌন উতসাহ লক্ষ্য করা গেছে, যাদের মুল ৮ টি ভাগে বিভক্ত করা হয়। এদের মধ্যে পরে সাবমিসিভনেস, ফুট ফেটিশিসম, BDSM সহ অন্যান্য তথাকথিত যৌন অস্বাভাবিকতা,এদের একত্রে বলে প্যারাফিলিয়া। অর্থাত, ফুট ফেটিশ, সাবমিসিভনেস বা BDSM চিকিতসা বিজ্ঞানের ভাষায় একরকম প্যারাফিলিয়া।
কারন: এটি এখনও সম্পুর্ন পরিষ্কার নয়, কিন্তু বর্তমান রিসার্চ বলছে এর উৎস ভ্রুন অবস্থায় মায়ের পেটে থাকাকালীন নিউরোএনাটমিক্যাল ডেভলপমেন্টে। প্যারাফিলিয়া থাকা বেশিরভাগ ব্যক্তির ভ্রুন অবস্থায় অত্যধিক ইস্ট্রোজেনের উপস্থিতিতে বেড়েছে, যার ফলে তার ব্রেনের কিছু গঠনগত পরিবর্তন ও নিউরোট্রান্সমিটার ও হরমোনের অনুপাতের তারতম্যের ফলে তার এই তথাকথিত অস্বাভাবিকতা। এর সাথে কম বয়সের বিভিন্ন চিন্তা ও মানসিকতা এর বিকাশে ভুমিকা রাখে।
* প্যারাফিলিয়া কি রোগ? এর কি চিকিতসা দরকার?
বর্তমান যুগে যেকোন মানসিক সমস্যার চিহ্নিতকরন, ক্লাসিফিকেশন, ও চিকিতসার জন্য যে ম্যানুয়াল বিশ্বব্যাপি প্রচলিত সেটা হল, american psychiatric association এর The Diagnostic and Statistical Manual of Mental Disorders ( DSM). এর সর্বশেষ edition DSM 5 এ প্যারাফিলিয়া সম্পর্কে কি বলছে দেখা যাক।
DSM5 প্রথমেই paraphilia ও paraphilic disorder কে আলাদা করছে। প্যারাফিলিয়ার অর্থ ফেটিশ, bdsm এর মত তথাকথিত যৌন অস্বাভাবিকতা। এই বিষয়গুলি কাউকে যৌনভাবে উত্তেজিত করলে তার প্যারাফিলিয়া আছে। আর এগুলি কারো ক্ষেত্রে যদি নিয়ন্ত্রনের বাইরে চলে গিয়ে তাকে বা তার পার্টনারকে মানসিক চাপ, পীড়া বা উতকন্ঠার মধ্যে ফেলে তবে সেটা প্যারাফিলিক ডিসঅর্ডার। DSM5 অনুযায়ী যতক্ষন প্যারাফিলিয়া কাউকে মানসিক পীড়া বা চাপের মধ্যে না ফেলছে, যদি সে এটা নিয়ে খুশি থাকে এবং তার এই অভ্যাসের কারনে কারো ক্ষতি না হয় তাহলে সেটাকে রোগ হিসাবে চিহ্নিত করা হবে না বা এর চিকিতসার কোন প্রয়োজনও নেই।( অর্থাৎ যদি প্যারাফিলিয়া, প্যারাফিলিক ডিসঅর্ডারের পর্যায়ে না পৌছায় তবে চিকিতসার কোন প্রশ্নই নেই, কারন এটা রোগ হিসাবেই ধরা হবে না)।
এটা প্রাথমিকভাবে নিজেকেই বুঝতে হবে নিজের এই টান কি নিজের নিয়ন্ত্রনের বাইরে চলে যায় প্রায়ই? এটা কি অত্যধিক মানসিক পীড়নের কারন হয়ে দাঁড়াচ্ছে? যদি উত্তর হ্যাঁ হয়, সেক্ষেত্রে সাইকোলজিস্টের স্মরনাপন্ন হওয়ার প্রয়োজন আছে, অন্যথায় নেই।
*চিকিতসা :
চিকিতসার প্রয়োজন তখনই হবে যখন নিজে বা অন্য কেউ এর দ্বারা অত্যধিক মানসিক পীড়নের সম্মুখীন হবে বা দৈনন্দিন জীবনের স্বাভাবিক কাজকর্ম ব্যহত হবে অত্যধিক প্যারাফিলিক চাহিদার জন্য। সেক্ষেত্রে সাইকোলজিস্টের কাছে গেলে চিকিতসা পদ্ধতি হিসাবে তিনি বিহেবিয়ারাল থেরাপি, ওষুধ বা উভয়ের কম্বিনেশন ব্যবহার করতে পারেন।
cognitive behavioral therapy তে আক্রান্তকে বিভিন্ন স্ট্রাটেজির মাধ্যমে প্যারাফিলিক চিন্তা থেকে দূরে সরে থাকতে শেখান হয়। আর ওষুধ দিয়েও মূলত যৌন উত্তেজনা কমানোর ব্যবস্থা করা হয়। আলাদা করে প্যারাফিলিক চিন্তা কমিয়ে মূলধারার যৌনচিন্তা বাড়াবে এরকম কোন ওষুধ নেই। এক্ষেত্রে মূলত SSRI বা এন্টিএন্ড্রোজেন গ্রুপের ওষুধ ব্যবহৃত হয় যারা জীবদেহের সামগ্রিক যৌন আচরন কমিয়ে দেয়।