Sunday 1 January 2023

রাজকন্যা ঋত্বিকা...

রাজকন্যা ঋত্বিকা... প্রায় তিনশো বছর আগের কথা। পূর্বদেশে সুবিশাল কমলপুর ও তার পাশে সীতাপুর নামক এক ছোট প্রতিবেশী রাজ্য অবস্থিত ছিল । দুই রাজ্যের সংযোগস্থলে প্রতিবছর পৌষ সংক্রান্তিতে বিশাল মেলা হয়। সেই মেলা প্রাঙ্গনে কমলপুরের রাজকুমার অয়ন ও সীতাপুরের রাজকুমারী ঋত্বিকার দেখা হল অপ্রতাশিত ভাবে । ১৬ বছর বয়সী সুন্দরী ঋত্বিকার দর্শন পেয়ে বছর ১৯ এর সুঠাম সুপুরুষ রাজপুত্রের হৃদয় কোমল হতে বেশি সময় লাগল না। কিন্তু বহু লোকের ভিড়ে তাদের তেমন বাক্যালাপ সম্ভব হল না। পরের সপ্তাহে রাজপুত্র তার বন্ধুসম ভৃত্য মধুকে নিয়ে পার্শবর্তী রাজ্যে উপস্থিত হল। রাজপুত্র যখন খাদ্যগ্রহনের পরে সুবিশাল অতিথিশালায় কিঞ্চিত বিশ্রাম নিতে গেল তখন তার বন্ধু মধু তার প্রেরিত বার্তা নিয়ে অন্দর মহলে প্রবেশ করল। অন্দর মহলে সে তার বার্তা রাজকন্যার খাসচাকরানী উলিকে দিল। চাকরানী উলির বয়স অন্তত ৬০, মাথার সব চুল ধপধপে সাদা। সে নিজের পরিচয় দান করল রাজকন্যার ব্যক্তিগত দাসী রুপে। জানাল ছোট থেকে কন্যাসম স্নেহে সেই রাজকন্যাকে পালন করেছে। আজ তার প্রতিদানে রাজকন্যা তাকে নিজের ব্যক্তিগত দাসী হওয়ার সুযোগ দিয়েছেন। রাজকন্যার মোট ১০ জন দাস ও দাসীর মধ্যে সেই প্রধান। রাজকন্যাকে গিয়ে দাসী তার বার্তা দিল। ষোড়শী রাজকন্যা বার্তা পেয়ে দাসীর দুই গালে খুব জোরে দুই থাপ্পর মেরে অঙ্গুলিহেলনে তাকে বাইরের দরজার দিকে নির্দেশ করল। দাসী তার প্রভু রাজকন্যার হাতে থাপ্পর খেয়ে তার চটি পরা পায়ে মাথা ঠেকিয়ে প্রনাম করল। দাসী ফিরে এলে মধু ভাবল রাজকন্যা দেখা করতে আগ্রহী নয়। কিন্তু সে দাসীকে নিয়ে রাজপুত্রের কাছে আসতেই রাজপুত্র বলল - "রাজকন্যা এত জোরে দাসীর দুই গালে থাপ্পর মেরেছেন যে এখনো তার দুই গালে দশ আঙুলের ছাপ দেখা যাচ্ছে। এই থাপ্পরের ১০ আঙুলের ছাপের অর্থ রাজকন্যা রাত ১০ টায় দর্শন লাভে আগ্রহী। আর দরজার দিকে আঙুল দিয়ে তিনি বুঝিয়েছেন এই দরজার বাইরে অপেক্ষা করতে।" মধু বলল, "কিন্তু রাজকন্যা মুখে বললেই তো পারত। মাতৃসমা চাকরানীকে এইভাবে থাপ্পর মারা কেন?" রাজপুত্র হেসে বলল - "সংকেতে কথা বলার কিছু সুবিধা আছে। এর ফলে আমার মত বিদ্বান ছাড়া কেউ এর অর্থ বুঝতে পারবে না। ফলে রাত্রে রাজকন্যার নিরাপত্তা বিঘ্নিত হওয়ার সম্ভাবনা নেই। আর ঋত্বিকার মত সুন্দরী রাজকন্যার হাতে থাপ্পর খেতে পাওয়া এর মত বুড়ি দাসীর কাছে পরম সৌভাগ্য। তাই না দাসী মা? " দাসী মস্তক অবনত রেখে রাজপুত্রকে প্রনাম করে বলল - "যথার্থ বলেছেন আপনি রাজপুত্র। রাজকন্যা আমার কন্যাসমা হলেও আমার কাছে উনি সাক্ষাত দেবী। ওনার কাছে থাপ্পর বা লাথি খাওয়া আমার পরম সৌভাগ্য। উনি মুখে না বলে আমাকে আঘাত করায় আমি খুবই খুশি হয়েছি। আর উনি এরকম প্রায়ই করে থাকেন।" সেই রাতে রাজপুত্র রাজকন্যার সাক্ষাতে গেল যথাসময়ে। সারারাত গাঢ় প্রেমের পরে সূর্যোদয়ের পূর্বে সে বিশ্রামাগারে ফিরে এল। বেলা হতে সে বন্ধুকে নিয়ে দেশে ফিরে এল। পরের মাসে সে আবার বন্ধু মধুকে নিয়ে প্রেমিকার সন্ধানে এল। আবার একই ঘটনা ঘটল। এবার দাসী বার্তা নিয়ে রাজকন্যার কাছে যেতে রাজকন্যা দাসীর চুলের মুঠি ধরে প্রবল আকর্ষন বলে তাকে বাইরের দরজার দিকে নিয়ে এল। তারপর ডান পায়ের হাঁটু দিয়ে তার পেটে প্রবল জোরে আঘাত করল। দাসী আঘাতের ফলে মেঝেতে উলটে পরল। তারপরে ১৬ বছর বয়সী ফর্শা সুন্দরী প্রভু রাজকন্যাকে ভক্তিভরে শাষ্টাঙ্গে প্রনাম করল ৬০ বছর বয়সী কৃষ্ণাঙ্গ দাসী। দাসী ফিরে আসতে রাজপুত্র তার বার্তা শুনে একটু ভেবে বলল " পেট দেহের মধ্য স্থল। দেহের মধ্যস্থলে আঘাত করে রাজকন্যা আমাকে মধ্যরাত ১২ টায় যেতে বলেছে। আর এই জটিল সাঙ্কেতিক ভাষার মাধ্যমে সে আমার বিদ্যার পরীক্ষাও নিচ্ছে।" সেই রাতেও সারারাত অভিসারের পরে রাজপুত্র ভোরের আগে বিশ্রামাগারে ফিরে বিশ্রাম নিয়ে বেলা দ্বিপ্রহরে নিজ রাজ্যের দিকে রওনা হল। পরের মাসে রাজপুত্র আবার এসে উপস্থিত। এবার তার বার্তা নিয়ে দাসী আসতেই রাজকন্যা ঋত্বিকা তার চুলের মুঠি ধরে টেনে এক ধাক্কায় মেঝেতে ফেলে দিল। তারপর পাদুকা সমেত পা দিয়ে নিজের দাসীর মুখে পদাঘাত করতে লাগল রাজকন্যা। প্রথমে চটি পরা বাঁ পা দিয়ে ৫ বার। তারপরে চটি পরা ডান পা দিয়ে ৬ বার। মোট ১১ বার রাজকন্যা তার দাসীর মুখে চটি পরা পায়ে লাথি মারল। এরপরে দাসী কৃতজ্ঞতায় তার প্রভু রাজকন্যার মহাণ শ্রীচরণে নিজের ক্ষুদ্র তুচ্ছ মস্তক স্থাপন করে তাকে ধন্যবাদ দিতে লাগল। রাজকন্যা তার মাথায় চটি পরা পা রেখে তাকে আশির্বাদ করতে সে ফিরে এল। রাজপুত্র আজ বেশ কিছুক্ষন ভেবে বলল মোট ১১ বার মুখে পদাঘাতের মাধ্যমে রাজকন্যা রাত ১১ টা নির্দেশ করেছে। আর নিচে মেঝেতে ফেলে লাথি মারার অর্থ আজ সে প্রাসাদের নিচে দেখা করতে চায়। আজকেও যথারীতি সারারাত অভিসার চলল। প্রভাতকাল উপস্থিত হতে রাজকন্যা রাজপুত্রের হাত ধরে বলল, " হে প্রিয়, আমি বিবাহের জন্য প্রস্তুত। তবে আমার একটি শর্ত আছে। আমি আমার মাতৃস্থানীয়া দাসী উলি বুড়িকে আমার সাথে নিয়ে যাব। ও আমাকে ভগবানের মত শ্রদ্ধা করে। আমার ইচ্ছা আমি বিবাহের মন্ডপেও জন সমক্ষে ওর মুখের উপরে জুতো পরে দাঁড়িয়ে তোমার হাত থেকে মালা পরব।" রাজপুত্র মৃদু হাসি দিয়ে বলল " অবশ্যই হে প্রিয়া। ও সারাজীবন তোমার দাসী হয়ে তোমার পদসেবা করুক। আর আমিও তোমাকে নতুন রাজ্যে নতুন এক ডজন দাস ও দাসী উপহার দেব। যেমন আমার বা আমার ভ্রাতা ও ভগিনীদের আছে।" অর্ধবর্ষ অতিক্রান্ত হওয়ার পরে অবশেষে সেই পবিত্র সুন্দর দিন উপস্থিত হল। সর্বসমক্ষে নিজ দাসী উলি বুড়ির মুখের উপরে জুতো পরা পায়ে দাঁড়িয়ে মালা বিনিময় করে রাজপুত্র অয়নকে নিজের জীবনসঙ্গী হিসাবে বেছে নিল ষোড়শী পরমা সুন্দরী রাজকন্যা ঋত্বিকা। বিবাহের পরে নব বধু ঋত্বিকা সঠিক মাহেন্দ্রক্ষনে রাজপ্রাসাদে এসে উপস্থিত হল। তার পরনে রাজরানীর পোশাক, পায়ে স্বর্নখচিত পাদুকা। তাকে অভ্যুর্থনা জানাতে রাজপ্রাসাদের মেঝেতে শুয়ে আছে কয়েকশো দাস ও দাসী। তাদের মুখের উপরে জুতো পরা পা রেখে হেঁটে রাজপ্রাসাদে অন্দরমহলে প্রবেশ করল রাজকন্যা ঋত্বিকা। তার এক হাতে ধরা একটি কলার, অন্য হাতে চাবুক । আর হাতের সেই কলারের অন্য প্রান্ত বাঁধা উলি দাসীর গলায়। নিজের প্রভুর পিছনে চার হাত পায়ে ঠিক প্রভু ভক্ত সারমেয়র ন্যায়ে রাজপ্রাসাদে প্রবেশ করল উলি বুড়ি, আর সুযোগ পেলেই প্রভুর জুতোয় অঙ্কন করতে লাগল প্রগাঢ় চুম্বন। প্রাসাদে এসে ঋত্বিকা প্রথমে বয়জ্যেষ্ঠদের সাথে পরিচিত হল। এরপরে তার পরিচয় হল অয়নের একমাত্র কনিষ্ঠ ভ্রাতা ও দুই কনিষ্ঠা সহোদরা ভগিনীর সাথে। এরা এখন থেকে তার বন্ধু। এরপরে রাজপুত্র ও কন্যাদের শতাধিক দাস ও দাসী একে একে এসে ঋত্বিকার পাদুকা পরিহিত পদযুগলে মস্তক রেখে তার আশির্বাদ গ্রহণ করল। ঋত্বিকা হাসিমুখে এদের সবার মাথার উপরে জুতো পরা পা রেখে আশির্বাদ করল। সত্যি, কি বিশাল রাজ্য এ কমলপুর! যেমন শস্যপুর্ণ এ রাজ্যের প্রতিটি ক্ষেত, তেমনই বিশাল এ রাজবাড়ি। আর রাজপুত্র ও রাজকন্যাদের জন্য শতাধিক ক্রীতদাস! যারা আছে শুধু তাদের ৫ জন প্রভুর আদেশ পালন করতে। আর উলি দাসী তো আছেই! সাথে আছে অয়নের মত বীর এক রাজপুত্র, তার জীবনসঙ্গী হিসাবে! সে ভবিষ্যতে হতে চলেছে এই সুবিশাল রাজ্যের রাজরাণী! নিজেকে আজ প্রকৃতই ভাগ্যবান মনে হচ্ছিল ঋত্বিকার।