Friday 1 July 2022

আহেলীর জুতো ও আমার টুপি...

আমার এক বন্ধুর শেয়ার করা বাস্তব জীবনের ছোট এক অভিজ্ঞতা শেয়ার করছি ;- তখন আমার ক্লাস ১১, বয়স ১৬। ছোট থেকেই আমি খুব চুপচাপ, শান্ত ও সাবমিসিভ। আমি স্কুলে যেতাম ট্রেনে করে। বাড়ি থেকে অনেকটা হেঁটে স্টেশান। শেখান থেকে ৫-৬ টা স্টেশান ট্রেনে করে গিয়ে স্কুল। গরম কালে অনেকটা হেঁটে স্টেশানে যেতে হত বলে আমি মাথায় টুপি পরে যেতাম। একদিন বাড়ি ফেরার পথে স্টেশানে একটা ভিশন সুন্দরী মেয়েকে দেখলাম। দেখে মনে হল আমার চেয়ে ২-৩ বছরের ছোট। স্কুলের ড্রেস দেখে বুঝলাম আমাদের পাশের কো-য়েড স্কুলে পরে। আরো ৫-৬ জন ওর ক্লাসমেট ছেলে মেয়ের সাথে গল্প করছে। মেয়েটির আচরনে কিরকম এক অদ্ভুত ডমিনেটিং ভাব লক্ষ করলাম। একটু দূরে দাঁড়িয়ে থাকায় বুঝতে পারয়াম না ও কি বলছে। কিন্তু মনে হল আমার চেহারা বা মাথা নিচু করে চলা নিয়ে ব্যাঙ্গ করছে। আমার ঠিক কি হল জানি না। যা শুনে সবার খারাপ লাগার কথা, আমার সেটা শুনতে এক কিরকম অদ্ভুত ভাল লাগছিল। মেয়েটি ট্রেনে যেই কামড়ায় উঠলো আমিও সেই কামড়ায় গিয়ে উঠলাম। মেয়েটির দুটো সিট দূরে বসলাম। মেয়েটির বন্ধুদের সাথে কথা শুনে বুঝলাম ও ক্লাস ৯ এ পড়ে, আর ওর নাম আহেলী। ৩-৪ টে স্টেশানের মধ্যে ওর বাকি বন্ধুরা সবাই নেমে গেল। শুধু সেই মেয়েটি আর তার এক বান্ধবী বাদে। আমি যে স্টেশানে নামব তার আগের স্টেশানে নামার জন্য উঠে দাঁড়াল মেয়েটি। বেরনোর যথেস্ট জায়গা ছিল, তারপরেও আমাকে অকারনে একটা ধাক্কা দিয়ে বলল, " এই ছেলে , সরে বোস। আমাদের বেরোতে দে!" আমি আরো গুটিয়ে সিটের সাথে লেগে বসতে গেলাম। আর আমার কোল থেকে আমার টুপিটা ট্রেনের মেঝেতে পরে গেল। মেয়েটি আমার মাথার টুপিটাকে ওর দুটো জুতোর তলাতেই মাড়িয়ে চলে গেল। মেয়েটির পিছনে পিছনে উঠল ওর বান্ধবী। তার একটা জুতোর তলা পরল আমার টুপির সাইডে। আমার মাথায় পরার টুপিটা নিজের জুতোর তলায় মাড়িয়ে গিয়ে কয়েক হাত দূরে গিয়ে মেয়েটি পিছন ফিরে তাকাল। মুখে কিরকম এক অবজ্ঞার হাসি! যেন নির্বাক হয়েই বলছে "তুই একটা লুজার!" আমার সামান্য একটু লজ্জা করলেও কিরকম একটা অদ্ভুত ভাল লাগা কাজ করছিল বলে বোঝাতে পারব না। আহেলী আর তার বান্ধবী আমার দিকে তাকিয়ে অবজ্ঞার হাসি হাসতে হাসতে নিজেদের মধ্যে নিচু স্বরে কি যেন কথা বলছিল ট্রেনের দরজার সামনে দাঁড়িয়ে। ট্রেন থামতে ওরা নেমে গেল। আমি সম্বিত ফিরে পেলাম যেন। টুপিটা মেঝে থেকে তুলে হাতে নিলাম। সেদিন দুপুরে বৃষ্টি হয়েছিল। আহেলীর জুতোর তলায় প্রচুর কাদা লেগে ছিল। আমার সাদা টুপির উপরে স্নিকার পরা পায়ের দুটো কালো ছাপ স্পষ্ট বোঝা যাচ্ছে! সাথে টুপির ডান দিক ঘেঁসে আরেকটা জুতোর ছাপের অর্ধেক,আহেলীর বান্ধবীর! আমি ট্রেন ভর্তি লোকের সামনে আহেলীর জুতোর ছাপ পরা টুপিটা মাথায় পরে নিলাম। আমার উলটো দিকে বসে থাকা লোকটা তার ফলে এমন ভাবে আমার দিকে তাকাল যেন আমার মাথায় সমস্যা আছে! আমার কিরকম অস্বস্তি হল। পরের স্টেশানেই আমার নামার কথা। আমি উঠে দরজার কাছে চলে গেলাম। আর স্টেশানে নেমে প্রায় ২৫-৩০ মিনিট আহেলীর জুতোর ছাপ পরা টুপি মাথায় দিয়ে হেঁটে আমি বাড়ি ফিরলাম। বাড়ি ফিরতে মা আমার টুপিটা দেখে অবাক হয়ে বলল, " কি অবস্থা করেছিস টুপিটার? দে, ধুয়ে দি।" আমি বললাম " থাক, আমি ধুয়ে নেব।" আমার প্রভু আহেলীর জুতোর ছাপ পরা টুপি কি আমি ধুতে পারি কখনো? জুতোর ছাপ দুটোর উপরে দুবার ভক্তি ভরে চুম্বন করলাম আমি। যদিও কি করছি, কেন করছি কিছুই বুঝতে পারছিলাম না তখন। শুধু এটুকু বুঝতে পারছিলাম আহেলীকে নিজের প্রভু বলে ভাবতে ভিশন ভাল লাগছিল আমার। পরের দিনও ফেরার সময়ে আহেলীদের একই কামড়ায় উঠলাম আমি। ওদের পাশের কোন সিট না পাওয়ায় উলটো দিকের একটা সিটে বসলাম আমি। আজকেও আহেলীর সব বন্ধু ৩ টে স্টেশান পেরোতেই নেমে গেল আহেলী ও তার ওই বান্ধবী জিয়া ছাড়া। আমি আহেলীর মুখের দিকে তাকানোর সাহস পাচ্ছিলাম না। মাঝে মাঝে আড়চোখে আহেলীর সাদা স্নিকার পরা ফর্শা পা দুটোর দিকে তাকাচ্ছিলাম শুধু। আহেলী ওর বান্ধবীকে কানে কানে কি একটা বলল। সেটা শুনে আহেলীর বান্ধবী একটু জোরেই বলল, " তোর দিকে তাকানোর চেষ্টা করছে মালটা। কিন্তু মুখের দিকে তাকানোর সাহস পাচ্ছে না। বারবার জুতোর দিকে তাকাচ্ছে আর চোখ ফিরিয়ে নিচ্ছে।" " মাল না। ওটা একটা লুজার। ওর দৌড় ওই পর্যন্তই।"- আহেলী বলল। ওদের কথা শুনে বুঝতে পারছিলাম ওরা খুব মজা পাচ্ছে আমার পিছনে লেগে,, ট্রেন ভর্তি লোকের সামনে আমাকে অপমান করতে পেরে। " এই লুজার, কোন ক্লাসে পড়িস রে তুই?" - আহেলী এবার আমাকে সরাসরি জিজ্ঞাসা করল। আমার খুব ভাল লাগছিল সত্যিই। কিন্তু ট্রেন ভর্তি লোকের সামনে কি করে উত্তর দেব বুঝে উঠতে পারলাম না। থত মত খেয়ে বললাম " আ-আ- আমাকে জিজ্ঞাসা করছ?" " হ্যাঁ রে, তুই ছাড়া আর কোন লুজার আছে ট্রেনে?" - আহেলী বলল। " আ-আ-আমি ক্লাস ১১ এ প-পড়ি।" কোমরকমে তুঁতলে বললাম আমি। " বাপ রে, তাহলে তো তোকে শুধু লুজার বলা যাবে না। লুজার-দা বলতে হবে।"- এই বলে আহেলী মুখ চেপে হাসতে লাগল। "এবার ওঠ আহেলী, স্টেশান এসে যাবে।" এই বলে আহেলীকে খুঁচিয়ে আহেলীর বান্ধবী জিয়া আমাকে বলল, " আজ আর তোর মাথার টুপি আমাদের জুতোর নিচে ফেলবি না?" - এই বলে ও আর আহেলী দুজনেই উঠে পরল। আমার কি যে হল, আমার কোল থেকে আবার টুপিটা নিচে মেঝেতে খসে পরল। ( আগের দিনের টুপিটা,সযত্নে লুকিয়ে রেখে সেদিন আমি নতুন একটা টুপি পরে গিয়েছিলাম। আজ জিয়া আগে ছিল। সে ইচ্ছা করলে টুপিটা এড়িয়েই চলে যেতে পারত। কারন আমি উলটো দিকের প্রথম সিটে বসেছিলাম। কিন্তু আমাকে অবাক করে জিয়া নিজের দুই জুতোর তলাতেই একবার করে আমার টুপিটা মাড়াল। ও নামতেই আহেলী নিজের জুতো পরা দুই পা আমার টুপির উপরে তুলে দিল। তারপরে যেভাবে পাপোষে পা মোছে সেভাবে আমার টুপির উপরে নিজের দুই জুতোর তলা মুছতে লাগল। আমার উলটো দিকে বসা একটা বয়স্ক টাক মাথা লোক এবারে প্রতিবাদ করল, " এই তোমরা কি করছ ওর সাথে? একে তো যা তা বলছিলে শুনলাম, তারপর এখন মাথার টুপিতে জুতো মুছছ? তোমাদের বাড়িতে আর স্কুলে এই শিক্ষা দেয় নাকি?" " না দাদু, আমাদের বাড়ি আর স্কুলে টেকো লোকেদের টাকে জুতো মোছার শিক্ষা দেয়।" টেকো লোকটা আরো কিছু বলতে যাচ্ছিল রেগে গিয়ে। কিন্তু আমি তার আগে মুখ খুললাম, " আ-আ-আপনাকে তো কিছু বলছিল না। যা বলছিল বা করছিল তা আ-আমার সাথে। আ-আপনি কেন.." আমার কথা শেষ হওয়ার আগেই আহেলী আমার টুপির উপরে দাঁড়িয়েই হাত বাড়িয়ে আমার গাল দুটো টিপে দিয়ে বলল, " বাহ, তুই তো দেখি খুব মিষ্টি লুজার-দা।" ও আরও কিছু বলতে যাচ্ছিল। কিন্তু ট্রেন স্টেশানে থেমে যাওয়ায় ও আর ওর বান্ধবী তাড়াতাড়ি নেমে গেল। আর আমি মেঝে থেকে আহেলী আর তার বান্ধবীর জুতো মোছা টুপিটা তুলে কালকের মতই মাথায় পরে নিলাম ট্রেন ভর্তি লোকের চোখের সামনেই । সেই টেকো লোকটা মাঝ খানে থতমত খেয়ে একটু চুপ করেছিল। এবার আমার দিকে তাকিয়ে বলল, " তোমার মাথার সব স্ক্রু কি ঢিলা? কে তোমাকে অপমান করতে যাচ্ছিল আর কে সাপোর্ট করছে সেটাও কি বোঝ না? তোমার চেয়ে ছোট দুটো মেয়ে তোমার মাথার টুপিতে নিজেদের জুতো মুছল। আর সেই টুপি তুমি মাথায় পরছ? তুমি কি পুরো পাগল নাকি কোন আত্মসম্মান বোধই নেই তোমার?" আমি আর কোন উত্তর দিলাম না। আমার মনে হল এবার ট্রেন শুদ্ধু লোক হয়ত আমার পিছনে লাগবে। ট্রেন তখনো আগের স্টেশান থেকে ছাড়েনি। আমি কোন কথা না বলে তাড়াতাড়ি ওই কামড়া থেকে নেমে পাশের কামড়ায় গিয়ে উঠলাম। আহেলীর পিছনে লাগা আমার যতই ভাল লাগুক অন্য লোকে কথা শোনালে কি করে ম্যানেজ করব সেটা সেদিন বুঝতে পারিনি। আর সেই ভয়েই হয়ত পরের কয়েক মাস আহেলীর সাথে এক কামড়ায় ওঠার সাহস পাইনি। আর তারপরে ওকে আর খুঁজেও পাইনি। হয় ও আগে বা পরের ট্রেনে যেত। হয়ত বা বাস বা অন্য কিছুতে। পরের বছর আমি ওর স্কুলের সামনে গিয়েও ওকে খোজার চেষ্টা করেছিলাম। যেকোন কারনেই হোক, আর দেখতে পাইনি। এখন ভাবলে খারাপ লাগে যে লোক লজ্জার কারনে দুই দিনের পরে আমি ওকে এড়িয়ে অন্য ট্রেনের কামড়ায় উঠতাম। ওর মত সুন্দরী ডমিনেটিং মেয়ের জুতোর তলায় নিজেকে সঁপে দিতে পারলে আমার জীবন ধন্য হয়ে যেত। কিন্তু, বাস্তব সব সময় গল্পের মত সুন্দর হয় না। আর আমাকে নিয়ে মজা করতে গিয়ে যদি আহেলী ওই টেকো দাদুর মত একাধিক লোকের রোষের মুখে পরত সেটা সবচেয়ে খারাপ হত। হয়ত সেই ভয়েই আমি আর আহেলীর সাথে এক কামড়ায় ওঠার সাহস পেতাম না তখন। আমার স্মৃতি বলতে শুধু আহেলীর জুতোর তলায় মাড়ানো আমার টুপি দুটো। সেই দুটো এখনো সযত্নে সাজিয়ে রেখেছি আমি।